দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে গুম-খুন বিচারবহির্ভূত হত্যা, চারিদিকে লাশের গন্ধ আর হাহাকার চলছে: রিজভী

0

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশ বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের পরিবর্তে, মুক্তচিন্তার পরিবর্তে দেশে আজ গুম-খুন আর বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। চারদিকে লাশের গন্ধ আর হাহাকার চলছে।’

করোনায় আক্রান্তরা ‘মৌলিক চিকিৎসা’ পাচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘দু-একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা রয়েছে। সরকারি হাসপালগুলোতে একেবারেই নেই। আর মফস্বল হাসপাতালে তো ভয়ঙ্কর অবস্থা। ওখানে না আছে কোনও আইসিইউ, না আছে ওষুধ কিংবা কোনও ভালো চিকিৎসা।’

রিজভী বলেন, ‘এভাবে দেশ চলতে পারে না। কেবল একটি দায়িত্বহীন সরকার থাকলেই এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। সরকারের মন্ত্রীরা বড় বড় কথা বলছেন, কাজের কাজ কিছুই করছেন না।’

বুধবার (১১ আগস্ট) দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে আর্তমানবতার সেবায় কেরাণীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ থানা বিএনপির উদ্যোগে ‘করোনা হেল্প সেল’ সেন্টার থেকে চিকিৎসা ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘সরকার বলছে পালাক্রমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেবে। কিন্তু স্কুল আর কলেজ খোলা যাবে না। আমরা দেখেছি উইরোপে স্কুল ও কলেজ খুলে দিয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা দিয়ে। যাতে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস না হয়, সেটি তারা আগে করছে। কিন্তু আমাদের সরকার সেটি করছে না।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন- একে একে সব খুলে দিচ্ছি। শিল্প কলকারখানা, গণপরিবহন, মার্কেটসহ সব খুলে দিচ্ছে। কিন্তু স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেবেন না। আমরা দেখতে পেলাম ইউরোপে স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিয়ে। ছেলেদের জীবন ধ্বংস করে নাই। অথচ আমাদের সরকার স্কুল-কলেজ খুলে দিচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘অথর্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ন্যূনতম করোনা সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন- ‘আমার করার কিছু নেই’। অথচ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী অক্সিজেন কন্টেন্ট দিয়েছে যা বিমানবন্দরে পড়ে আছে। আজকে পথে-ঘাটে, ধানক্ষেতে মানুষের লাশ পড়ে আছে। শুধু চারদিকে লাশের গন্ধ আর হাহাকার চলছে।’

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘যেখানে গণতন্ত্রের বদলে, মুক্তচিন্তা বদলে, বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গুম খুন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার সেখানে বিরোধী দল জনগণের পাশে দাঁড়ানো কষ্টকর। তারপরও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কেউ বসে নেই। আতঙ্কের মধ্যেও নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে আছেন।’

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘সরকার লকডাউন তুলে দিয়েছেন। যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ জনের বেশি লোক মারা যাচ্ছে সরকার হিসেবে। গ্রাম গঞ্জে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের হিসাব নেই। অথচ যখন ৫০ জন মারা যেত তখন লকডাউন দিয়েছিল।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা সরকারের হুমকির মুখোমুখি, যে কোনও সময় মামলায় পড়তে হতে পারে। আমাদের যেকোনও কর্মীর লাশ ধান ক্ষেতে পড়ে থাকতে পারে। আমাদের যেকোনও তরুণ কর্মী গুম হয়ে যেতে পারে। সরকারের এই বিভীষিকার মধ্যে মানুষের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, এই করোনা মহামারির মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা বসে নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ স্বাধীনভাবে চলছে না। এরা (আওয়ামী লীগ) যখন ক্ষমতায় এসেছেন তখন থেকেই এক বিভীষিকার মধ্যে চলছে দেশ। গণতন্ত্রের পরিবর্তে, মুক্তচিন্তার পরিবর্তে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। সেখানে বিরোধীদল মানুষের পক্ষে কীভাবে দাঁড়াবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আজকে কেউ বসে নেই। এতো আতঙ্কের মধ্যেও আমাদের কোনও নেতাকর্মী বসে নেই।’

‘যখন সরকারের জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা না থাকে তখন যা খুশি তাই করতে পারে’বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি দায়িত্বশীল সরকার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দায়িত্বশীল সরকার রয়েছে সেখানে দেখেছি করোনা ঢুকতে পারেনি। আফ্রিকার অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে করোনা ঢুকতে পারেনি। হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম সেখানে প্রচণ্ডভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক পরে আসছে করোনা, অন্য দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকার করোনা মোকাবিলা করতে পারতেন। কিন্তু করেন নি।’

রিজভী বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী; করোনা কী, করোনা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে- যদি জানতেন তাহলে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন- ‘আমার কী করণীয় আছে?’’

কেরাণীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন মাস্টার, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, কেরাণীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com