সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় মহাসঙ্কটে দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে। দেশের চলমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিপর্যয়, নিশিরাতের সরকার পরিকল্পিতভাবে’ই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে, সরকার কোবিড-নাইনটিন পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দায়িত্বহীন এক ক্ষমতালোভীর কূটচালে এক গভীর অনিশ্চয়তায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। অনিশ্চয়তায়, দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী এবং প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষকের ভবিষ্যৎ।
শুক্রবার (৬ আগস্ট ২০২১) বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থা: সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় মহাসঙ্কটে জাতির ভবিষ্যত’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় মূল বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২১ আগস্ট, কথিত ওয়ান ইলেভেন এভাবে নানামুখী ষড়যন্ত্রের পথ ধরে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মহাজোটের নাম একজোট হয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার টার্গেট নিয়েছে। একইভাবে তারা, বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের পথ ধরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার সেই শুরু থেকেই প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষায় অবাধ নকলের সুযোগ প্রদান এবং হীন স্বার্থে পরীক্ষায় পাশের হার বাড়িয়ে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে হাস্যকর তুলেছে। সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায়, কবিড-নাইনটিন পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে, নিশিরাতের সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে রেখেছে।
তারেক রহমান বলেন, একনাগাড়ে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ করে রাখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার কবে খুলবে, সেটিরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অপরদিকে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে বর্তমান পরিস্থিতি বিপদসংকুল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়ে করোনাভাইরাস হানা দেয়ার কয়েকমাস পর অর্থাৎ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ডেল্টা ভাইরাস সংক্রমনের আগ পর্যন্ত এই সময়টিতে সারা বিশ্বেই ভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিলো।
এই সময়টিতে অর্থাৎ ২০২০ সালের শেষের তিন-চার মাস এবং চলতি বছরের জানুয়ারী এবং ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি পর্যন্ত, সব মিলিয়ে কমপক্ষে চার-পাঁচ মাস, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থায় খুলে দেয়ার সুযোগ ছিল। বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশ এই সময়টিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নিয়েছে।
তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকার দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর স্বার্থে শিক্ষাঙ্গন খোলার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ-ই গ্রহণ করেনি। সরকার আন্তরিক হলে এই অবশ্যই বিকল্প পদ্ধতিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কয়েকমাস খুলে দেয়া যেত। সময় বন্টন করে, নির্বাচিত বিষয়ে এবং সংক্ষেপিত সিলেবাসে একাধিক গ্ৰুপে ক্লাস নেয়া যেত। এমনটি করা গেলে, অল্প সময়ের জন্য হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযোগ তাদের মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারতো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিবর্তে নিশিরাতের সরকার একদিকে নিজেদের হীন দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে দলীয় কর্মসূচি কিংবা উদযাপন অনুষ্ঠানের নামে বর্ডার খুলে দিয়ে ডেল্টা ভাইরাস আমদানি করেছে। অপরদিকে, খোলা রেখেছে দেশের সকল অফিস আদালত কল কারখানা। শুধুমাত্র বন্ধ রেখেছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষাঙ্গনে ফেরাতে গত দেড় বছরে নিশিরাতের সরকার কি কি উদ্যোগ নিয়েছে জনগণ জানতে চায়? জনগণ জানতে চায়, শিক্ষাঙ্গন খুলে দিতে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে, দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধি কিংবা বিজ্ঞজনদের নিয়ে কেন একটি পরামর্শ সভাও করা হয়নি? কেন সকল শিক্ষার্থীর জন্য বিকল্প পাঠদান পদ্ধতি বের করা হয়নি?
তারেক রহমান বলেন, বাস্তবতা হলো, নিশিরাতের সরকার, বাংলাদেশ টেলিভিশিনকেও শিক্ষাদানের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি দিনরাত ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ডিজিটাল করে চিৎকার করলেও শিক্ষাদানে সেটি সবার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কারণ, ক্ষমতাসীনদের অযথা চিৎকারের গতি তীব্র হলেও মোবাইল ইন্টারনেট স্পিডে বাংলাদেশ লজ্জাকরভাবে পিছিয়ে। মোবাইল ইন্টারনেট স্পিডে বাংলাদশের অবস্থান ১৩৭ টি দেশের মধ্যে ১৩৫। সুতরাং মোবাইল ডাটা দিয়ে অনলাইন শিক্ষা সম্ভব নয় অপরদিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ওয়াই-ফাই বা পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যাবহারের সুযোগও সীমিত। তাই, অনলাইনে শিক্ষাদানের গল্প, জনগণের সঙ্গে স্রেফ ধোকাবাজি ছাড়া কিছুই নয়।
তারেক রহমান বলেন, একাডেমিক সিলেবাসের সঙ্গে প্রায় যোগাযোগহীন এই প্রজন্ম। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবিমুখ রাখা গেলে পথ হারাবে আগামীর বাংলাদেশ। তাই, ভবিষ্যৎ বিপর্যয় এড়াতে এবং এই প্রজন্মের প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে আপাতত জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পড়াশুনা করতে না পেরেও যারা অটোপাশের সার্টিফিকেট পেয়েছে কিংবা অন্যান্য শ্রেণীর যারা প্রায় দেড়-দুই বছর একাডেমিক সিলেবাস থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছে তাদের সেই না পড়তে পারা বিষয়গুলো বিশেষ করে বাংলা-ইংরেজি-অংক, বিজ্ঞান এই কয়েকটি মৌলিক সাবজেক্টের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স প্রণয়ন করা দরকার।
এ ছাড়াও ক্ষতিগুলো আরো কিভাবে পুষিয়ে ওঠা যায়, এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করে অবিলম্বে সিলেবাস তৈরী এবং পাঠদান পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। প্রয়োজনে, গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের জন্য পৃথক পরিকল্পনা নিতে হবে। আর দেরি না করে, এই কাজটি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। যাতে করে কবিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়, বলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, আগামী পাঁচ বছর শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ রাখার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাঙ্গনের এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে রাষ্ট্রীয় বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সবাইকে মনে রাখা দরকার, নির্বাচন কমিশনের ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বন্দুকের জোরে হয়তো নিশিরাতের সরকার গঠন করা যায়, কিন্তু নিশিরাতের সরকারের অটোপাশের সার্টিফিকেটে দিয়ে শিক্ষিত-সভ্য জাতি গঠন করা যায়না।
তারেক রহমান বলেন, শুধুমাত্র দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাই নয় বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে, ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের চরিত্র নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
দেশের ছাত্র যুব সমাজকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের সকল অর্জনের অগ্রভাগে ছিল ছাত্র-যুব সমাজ। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার প্রিয় প্রাঙ্গন ছিল ক্যাম্পাস। সেই ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদেরকে সুকৌশলে দূরে রাখা হয়েছে। শিক্ষা মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। সেই মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষে কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শিক্ষাঙ্গনে ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দেশের ছাত্রসাম ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই মৌলিক মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিএনপির সর্বাত্মক সমর্থন থাকবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন অপশক্তির হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। দেশের জনগণ নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় জনস্বার্থ। নিরাপদ নয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এই অপশক্তির কবল থেকে বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি।
তিনি দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে তিনি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি বিশেষ করে দেশের ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আরো একবার ঐকবদ্ধভাবে স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিন। এই আন্দোলনে আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ‘সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’।
দেশের কোরোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তায় ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং জিয়াউর রহমানে ফাউন্ডেশনের ব্যানারে জাতীয়তাবাদি আদর্শে বিশ্বাসী চিকিৎসকগন যেভাবে সবাই, জনগণের সেবায় কাজ করছেন, আমি তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
তারেক রহমান বলেন, মানুষের কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত করাই শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শ। বিপদগ্রস্থ মানুষের সেবায় যিনি যার অবস্থান থেকে সাধ্যমতো ভূমিকা রেখে চলছেন দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এটিই দেশনেত্রীর নির্দেশনা।