৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ২০০৪ সালে ‘২১ আগষ্টের’ ঘটনা ঘটায়: তারেক রহমান
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ২০০৭ সালের তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের পর পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ, জনগণ হারিয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার। দেশের ইতিহাসে ওয়ান ইলেভেন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি। যারা বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে চায় সেই অপশক্তি এবং তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের ফসল ছিল বাংলাদেশের স্বার্থবিনাশী ২০০৭ সালের তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আয়োজিত ‘এক এগারো : বিরাজনীতিকরণের ধরাবাহিকতায় চলমান ফ্যাসিবাদ: গণতন্ত্রই মুক্তির পথ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় তারেক রহমান বলেন, ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে, বর্তমানে যেই রাজনৈতিক অপশক্তি গণতন্ত্র হত্যা এবং ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতা জবর দখল করে আছে
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তাদের পূর্বসূরিরাও একইভাবে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করেছিল, তারা দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে দেয়নি, তারা দেশে জন্ম দিয়েছিলো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ তাদের এমন নৈরাজ্য মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আওয়ামী লিগ এবং তাদের দোসর তথা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করেছিল। দেশের সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে৭৫ এর ৭ নভেম্বরের সেই পরাজিত অপশক্তি এখন মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির মিশন হচ্ছে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং
দেশের শক্তিমত্তার প্রতীক সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে রাখা। কারণ, এই অপশক্তি জানে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং দেশের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করা না গেলে ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির পক্ষে কখনো দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক ‘মাদার অফ ডেমোক্র্যাসি’ বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সাফল্য যাত্রা বাধাগ্রস্থ করতে অত্যন্ত সুপরিকল্পতিভাবে ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ২০০৪ সালে ‘২১ আগষ্টের’ ঘটনা ঘটায়।
তারেক রহমান বলেন, ‘২১ আগস্ট ‘ এবং কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘২১ আগস্ট’ এবং কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। একটি ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর নাটক মঞ্চস্থ করার জন্যই পরিকল্পতিভাবে ঘটানো হয়েছিলো ‘২১ আগষ্টের ঘটনা’ । ৭৫ সালের নভেম্বরে যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল, ২০০৭ সালে কথিত ‘ওয়ান-ইলেভেনে’র মাধ্যমে তারা সফল হয়। এরপরই তারা দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বিডিআর পিলখানায় সুকৌশলে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার নির্মম নিষ্ঠূর হত্যাযজ্ঞ ছিল তাদের সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের-ই অংশ।
তারেক রহমান বলেন, খোদ রাজধানীতে বিডিআর পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিলোনা। বরং সেটি ছিল ছিল একটি পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ। তারেক রহমান বলেন, শুধু ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসেই নয় ৭৫ সালের এর ৬ নভেম্বর দিনে-রাতেও বর্তমান ক্ষমতাসীন অপশক্তির পূর্বসূরিরা খোদ ক্যান্টনমেন্টের ভেতর এক ডজনের বেশি সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিল।
‘২০০৯ সালে রাজধানীর বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি রাখে’ বলেন তারেক রহমান
আলোচনা সভায় তারেক রহমান বলেন, ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই কথিত ‘২১ আগষ্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেনের’ আড়ালে ২০০৭ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এখন তারা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। প্রতিশোধ নিচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে।
প্রতিশোধ নিচ্ছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনীকে দাবিয়ে রাখার দুঃসাহস দেখিয়ে চলছে। তিনি বলেন, দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ও সেনাবাহিনীকে দাবিয়ে রাখতে পারলে কাদের লাভ আর কাদের ক্ষতি তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনকে এইসব প্রেক্ষাপটেই বিচার করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী কথিত ওয়ান ইলেভেন একটি রাজনৈতিক দল কিংবা একটি মাত্র নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের বিরুদ্ধে-ই ছিলোনা বরং এটি ছিল বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিনাশী একটি সুদূরপ্রসারী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।
তাই দেখা যায়, তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের পথ ধরে যে অপশক্তি ক্ষমতা জবর দখল করেছে, তারপর থেকেই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ। জনগণ হারিয়েছে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা। গৌরব ও মর্যাদা হারাচ্ছে সেনাবাহিনী।
সভায় দেশের সেনাবাহিনীর গৌরব ও মর্যাদার কথার স্মরণ করিয়ে দিয়ে তারেক রহমান বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টের ডিরেক্টর হওয়া
কিংবা জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশন-ই একটি দেশের সেনাবাহিনীর একমাত্র ‘ভিশন’ হতে পারেনা। বরং, একটি দেশের সেনাবাহিনী একটি দেশের সাহস, গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক। দেশের যে কোনো ক্রান্তিলঘ্নে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিজ দেশের জনগণের মনে যেমন সাহসের সঞ্চার করে তেমনি বহিঃশত্রুর বুকে কাঁপন ধরায়। অথচ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর এখন সেই গৌরবময় পরিস্থিতি রয়েছে কিনা প্রশ্ন সাবেক সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষকের সন্তান তারেক রহমানের।
তারেক রহমান বলেন, সীমান্তে ‘ফেলানী’দের হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে, নিজ দেশের মর্যাদার পক্ষে কথা বলায় ‘আবরার’দেরকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয় দেয়ার পরও সেনা কর্মকর্তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে, নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দেয়ার পরও চড় থাপ্পড় কিল ঘুষি দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হচ্ছে। সাবেক সেনা প্রধান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকের সন্তান তারেক রহমান বলেন, যে বাহিনী ছিল দেশের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক তাদের গৌরব, সম্মান, মর্যাদা নিয়ে কারা ছিনিমিনি খেলছে? এ সবই তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের কুফল, বললেন তারেক রহমান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যারা বলেছিলো ওয়ান ইলেভেন তাদের আন্দোলনের ফসল, তাদের কাছে দেশের স্বার্থ বড় নয় বরং পরিবারের স্বার্থ বড়। তাদের কাছে দেশের মর্যাদা বড় নয়, কথিত স্বামী-স্ত্রীর কূটনীতি বড়।
সুতরাং আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, ৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার থাকবেনা।
৭৫ এর নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তাই বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কথিত এই ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।