হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও ফেইলিওরের মধ্যে পার্থক্য
বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। ৪০ পার হতেই কিংবা অল্পবয়সীদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে হার্টের নানা সমস্যা। তবে হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কিংবা হার্ট ফেইলিওর সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। সবগুলোকে এক সমস্যা ভেবেই ধরে নেন অনেকেই।
আসলে হার্ট যখন নিজের থেকে রক্ত সঞ্চালন বা পাম্প করার ক্ষমতা হারায় সেই অবস্থাকেই আমরা সাধারণ ভাবে হার্ট ফেইলিওর বলতে পারি। হার্ট ফেইলিওয়রের আরেকটি ধরন হলো, যখন হৃদপিণ্ডের পেশি শক্ত হয়ে যায় ও শিথিল করতে অক্ষম হয়। অন্যদিকে হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হার্টে রক্ত সরবরাহে বাঁধা থাকে।
ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জামশেদ দালাল জানিয়েছেন, বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই হৃদরোগ সম্পর্কে কোনো সঠিক ধারণা নেই। অনেকের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কিংবা হার্ট ফেইলিওর নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা আছে।
হার্ট ফেইলিওর শুধু বয়স্কদের হয়?
এ বিষয়ে ডা. জামশেদ জানান, আগে ৫৫ পেরোনোর পরই হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা থাকত। তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই হয়তো জানেন না যে, হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি আগে থেকেই কিছুটা টের পাওয়া যায়। প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে থাকে শ্বাসকষ্ট, গোড়ালি ও পেট ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি ও খিদে কমে যাওয়া।
অনেক রোগীই মনে করেন হার্ট ফেলিওর মানেই জীবন শেষ। আসলে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়লে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে রোগী সুস্থ হতে পারেন। তবে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশন ছাড়া বুপায় নেই বলে জানান চিকিৎসক জামশেদ।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী?
হৃদস্পন্দনে সমস্যা কিংবা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে যখন তখন। একে অনেক সময় ভেন্ট্রিকিউলার ট্যাকিকার্ডিয়া অথবা ভেন্ট্রিকিউলার ফাইব্রিলেশন বলা হয়। সাধারণত হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েই এমনটা হয়, আবার হৃদস্পন্দন ভীষণ ধীর গতিতে হলেও এমনটা হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট ফেলিওর কী এক?
হঠাৎ হওয়া কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও হার্ট অ্যাটাক কিন্তু এক নয়। অনেকেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্যটা বোঝেন না, ফলে সমস্যায় পড়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন অনেকেই।
করোনারি আর্টারির কাজ হৃদপিণ্ডে রক্ত পাঠানো। কোনো কারণে একটি করোনারি আর্টারির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে বা রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক হয়। এ ক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হার্টে অক্সিজেন পৌঁছায় না। ফলে সেই জায়গার কোষগুলো মরে যায়। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ আলাদা। এক্ষেত্রে অ্যারিদমিয়ার কারণে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?
হার্ট অ্যাটাকের আগে একেকজনের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তবে সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো হাঁটতে গিয়ে বুকে চাপ। অনেকেই এই ব্যথাকে গ্যাসের সমস্যা ভেবে ভুল করেন।
দীর্ঘদিন এই সমস্যায় ভুগলে সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে সিভিয়ার প্যানক্রিয়াটাইটিস ছাড়া এমন ব্যথা হয় না। কাজেই বুঝে নিতে হবে এগুলো হার্ট থেকেই হচ্ছে।
অন্যান্য উপসর্গগুলো হলো- রাতে ঘুমের মধ্যে বুকে চাপ, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুম না আসা, ঘুম থেকে উঠে সকালে শরীর খারাপ লাগা, বুক ধড়ফড়, শ্বাস নিতে সমস্যা, ক্লান্ত লাগা ইত্যাদি।
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত কী করবেন?
হার্ট অ্যটাকে আক্রান্ত হয়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সিপিআর দিতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে কার্ডিও পালমোনারি রিসাসকিটেশন। এক্ষেত্রে আক্রান্তের বুকে চাপ দিতে হবে।
৩০ বার চাপ দেওয়ার পর একবার করে আক্রান্তের মুখে মুখ দিয়ে হাওয়া দিতে হবে। মুখ দিয়ে যদি হাওয়া দিতে নাও পারেন, শুধুই বুকে চাপ দিতে থাকুন ঘনঘন।
হৃদরোগের ঝুঁকি কাদের বেশি?
হার্টের সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, রক্তে বেশিমাত্রায় কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হরমোনঘটিত সমস্যা, ধূমপান, মদ্যপান ইত্যা কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। হার্ট ফেলিওরের ক্ষেত্রে নারীদের ঝুঁকি বেশি।
হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
> শর্করা জাতীয় খাবার যেমন, চিনি, গুড়, মধু, মিষ্টি এসব বাদ দিন
> রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খাবেন না।
> লাল মাংস স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, তা বাদ দিন।
> কলিজা, মাছের ডিম ইত্যাদিতে কোলেস্টেরল থাকে, তাই এগুলো খাওয়াও বাদ দিন।
> ট্রান্সফ্যাট আছে এমন খাবার খাবেন না।
> অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন আজই।
> চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরচর্চা করুন।
> প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস