হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কেন হয়?
রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অনেকেই জানতে পারেন হিমোগ্লোবিনের ঘাটতিতে ভুগছেন তিনি। এ সমস্যায় কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। তবে ক্রমশ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
হিমোগ্লোবিন কী?
রক্তের মাধ্যমে পুরো দেহে অক্সিজেন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পরিবাহিত হয়ে থাকে। রক্তের তিনটি কণিকার মধ্যে লোহিত কণিকায় থাকে বিশেষ ধরনের আয়রন, যাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন। এই হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হলো ধমনী থেকে দেহের সব স্থানে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কেন হয়?
হিমোগ্লোবিনের অভাব শরীরের একটি সাধারণ সমস্যা। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন এবং খনিজের অভাব হলেই দেখা দেয় হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি। ছোট-বড় সবার শরীরেই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
যদি গর্ভবতীরা অপুষ্টির শিকার হন এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়; তহলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। হিমোগ্লোবিনের অভাবে রক্ত প্রবাহে রক্তের ক্ষয় হয়। শরীরে অতিরিক্ত অক্সিজেনের অভাবে শরীরে শক্তির অভাব হয়। ফলে ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এছাড়া শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকে। শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবে ত্বক হলুদ হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে, ডাক্তার আয়রনের ঘাটতির জন্য নির্দিষ্ট ওষুধের একটি ডোজ লিখে দেন। হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কোনো রোগের লক্ষণ নয়।
হিমোগ্লোবিনের অভাব শুরু হয়, যখন শরীর সঠিক পরিমাণে প্রোটিন পায় না। সাধারণত নারীরা গর্ভবতী হলে, তাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত শারীরিক সমস্যার কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে।
প্রতিদিন গোসলে সাবান ব্যবহার কী ভালো?
চিনি খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিলে শরীরে যা ঘটে
> ক্যানসার
> আয়রনের অভাব
> লিউকোমিয়া
> সিরোসিস
> এইডস
> একাধিক মেলোমা
> লিম্ফোমা
> জিনগত অস্বাভাবিকতা
> ক্ষত থেকে রক্তপাত
> মহামারিতে অতিরিক্ত রক্তপাত
> নিয়মিত রক্তদাতা
> পেটের আলসার
> পেটের ক্যান্সার
> অর্শ্বরোগ
> বক্র কোষ রক্তাল্পতা
> ভিটামিনের অভাব
> হাইপোথাইরয়েডিজম
> হেমোলাইটিস
> মূত্রাশয় থেকে রক্তপাত
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়-
> মাথাব্যথা
> শ্বাসকষ্ট
> মাথা ঘোরা
> ব্যায়াম করতে অক্ষমতা
> খিটখিটে মেজাজ
> ক্লান্ত বোধ করা
> মনঃসংযোগের অভাব
> দুর্বল লাগা
> হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
হিমোগ্লোবিনের অভাব নির্ণয় করার উপায়
হিমোগ্লোবিনের অভাব নির্ণয়ের জন্য চিকৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। নিন্মোক্ত কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাপ সম্পর্কে জানা যায়।
> রক্ত গণনা।
> ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন বি-৯ পরীক্ষা করা হয়।
> রক্তে আয়রনের ঘাটতির জন্য পরীক্ষা করা ও
> প্রস্রাব পরীক্ষা।
প্রাকৃাতক উপায়ে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কী করবেন?
১. রক্তশূন্যতা থাকলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন- পালং শাক, মুসুর ডাল, মটরশুঁটি, চর্বিহীন মাংস, হাঁস-মুরগি, মাছ। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যেমন- সাইট্রাস ফল, ক্যাপসিকাম ও টমেটো ইত্যাদি।
২. ফোলাট (ভিটামিন বি ৯) এবং ভিটামিন বি ১২ লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। যে কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফোলাট সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন- শাক, অ্যাভোকাডো। ভিটামিন বি ১২-এর উৎস যেমন- ডিম, দুগ্ধজাত পণ্য, মাছ।
৩. বেদানার রসে আছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরে রক্তের অভাব পূরণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বেদানার রস পান করলে তা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। যে কারণে রক্ত চলাচল ভালো হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে রক্তের ঘাটতি মেটাতে বেদানার রস পান করুন।
৪. বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ফোলাট ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। যা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি মেটাতে কাজে লাগে। বিটরুটের রস পান করা বা স্যালাড, স্যুপ বা স্মুদিতে বিটরুট যোগ করা আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। লোহিত রক্ত কণিকাও তৈরি হয়।
৫. এছাড়া শরীরে নাইট্রেটের ঘাটতি পূরণ করে বিটরুট। অক্সিজেনের প্রবাহ উন্নত করতে পারে। যা হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬. প্রচুর পানি পান করুন ও এমন ফল খান যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। যেমন- শসা, তরমুজ এও কমলা লেবু খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ক্যাফেইনএড়িয়ে চলুন, কারণ এতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
সূত্র: লগ ইন টু হেলথ/এবিপি নিউজ