প্রদীপের ক্রসফায়ার বাণিজ্যের তথ্য সিনহার হাতে পৌঁছানোয় হত্যা

0

টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা নির্মূলের আড়ালে ওসি প্রদীপের কথিত ক্রসফায়ারে নিরীহ মানুষ হত্যা, ইয়াবা ও চোরাকারবার বাণিজ্য, সুন্দরী নারীদের ধর্ষণ এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার ডকুমেন্টারি তথ্য মেজর সিনহার হাতে পৌঁছে যাওয়ায় মেজর সিনহাকে হত্যার পরিকল্পনা নেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। সে কারণে প্রথমে মেজর সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল প্রদীপ-লিয়াকতরা। তাতে সফল না হয়ে সরাসরি গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের ভাবনায় ছিল অন্য দশটি ক্রসফায়ারের মতো এই হত্যাকাণ্ডটিও মিথ্যা গল্প সাজিয়ে সামাল দিতে পারবেন কিন্তু হয়নি।

সিনহা হত্যা মামলায় মেজর সিনহার সহকর্মী প্রত্যক্ষদর্শী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের আদালতে দেয়া বক্তব্যে এই তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া সোমবার ঘোষিত রায়েও হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিচারক কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রায় পড়ার সময় উল্লেখ করেন, ‘ঘটনাস্থলে দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা ছিলেন তারা সিনহাকে পরিচয় জেনে স্যালুট জানিয়ে চলে যেতে বললেন কিন্তু তাদের আবার আটক করার প্রয়োজন হলো কেন বা গুলি করার প্রয়োজন হলো কেন? এটা কি কোনো পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল? এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রহস্যটা কী আমি চেষ্টা করেছি সেটা বের করতে। আপনারা লক্ষ করেছেন দুই পক্ষকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করেছি কেন এই রকম ঘটনা ঘটল? বিশেষ করে ৩৪২ ধারায় এসআই শাহজাহানকে জিজ্ঞেস করেছি এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও বলছেন। দায়িত্বরতদের উদ্দেশে বলেছি, ‘এই হত্যাকাণ্ডটা প্রতিরোধ করতে পারলেন না কেন? দায়িত্ব ছিল চেকপোস্টে আটকে রাখা। যদি তাই হতো এই দুঃখজনক ঘটনাও ঘটত না এবং এই বিচারেরও প্রয়োজন হতো না। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা এসআই শাহজাহান খুব চমৎকারভাবে উত্তর দিয়ে বলেছেন, লিয়াকত আলী পাশে একটা বটগাছের নিচে দাঁড়ানো ছিল এবং ওনি হঠাৎ ১০ থেকে ২০ সেকেন্ডের মধ্যে গুলিটা করে ফেলেছেন। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটছে। এতে পরিষ্কার এই হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত।’

ঘোষিত রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছাবসরে গিয়ে দেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক, ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ডকুমেন্টারি ভিডিওচিত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য তিনি ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রতিষ্ঠার কাজ করছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও আরো দুইজন সহকর্মী নিয়ে ২০২০ সালের ৩ জুলাই কক্সবাজার আসেন। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে সাগর ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত হয়ে পড়েন। ধারণ করতে থাকেন নানা চিত্র। বেশ কিছু দিন তিনি কখনো পাহাড়ের চূড়ায় অথবা সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথেও তার সখ্য গড়ে ওঠে। কাজের ফাঁকে তিনি স্থানীয়দের দুঃখ-সুখের গল্প শোনেন। এসময় উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় ইয়াবা দমনের নামে ওসি প্রদীপের হত্যাযজ্ঞ চলছিল। স্থানীয় জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেজর সিনহা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে ওসি প্রদীপের ইয়াবা দমনের আড়ালে ইয়াবা বাণিজ্য, চোরাচালান ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের তথ্যপ্রমাণ পেয়ে যান। এতেই সংক্ষুব্ধ হয়ে রক্তনেশায় উন্মত্ত প্রদীপ মেজর সিনহাকে ক্রসফায়ারে শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com