জেনে নিন ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়-
অতিরিক্ত পরিশ্রম কিংবা ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। তবে ঘুম ঠিক থাকলে আবার পরিশ্রম না করেও যদি শরীর সব সময় ক্লান্ত ও ঘুম ঘুম ভাব হয় তাহলে তা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
কারণ বিভিন্ন কঠিন রোগের উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি অন্যতম। তাই কোনো কারণ ছাড়াই যদি প্রায়ই শরীরে ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব দেখেন তাহলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। জেনে নিন ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়-
স্লিপ অ্যাপনিয়া
স্লিপ অ্যাপনিয়া খুবই গুরুতর এক ব্যাধি। ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এই রোগের কারণে। ফলে রাতের ঘুমের মধ্যেই আপনার বেশ কয়েকবার পর্যন্ত ঘুম ভাঙতে পারে। যা হয়তো অনেকে টেরও পান না।
স্লিপ অ্যাপনিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি ৮ ঘণ্টা নিয়ম করে ঘুমালেও অজান্তেই রাতে বারবার ঘুম ভাঙার কারণে তাদের সঠিক ঘুম হয় না। ফলে সারাদিন তারা ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে কাটান।
এই সমস্যার সমাধানে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ধূমপান ত্যাগ করুন ও ঘুমানোর সময় যাতে শ্বাসনালি পথ খোলা থাকে সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিপিএপি ডিভাইসের ব্যবহার করুন।
শরীরে পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকলে
খুব কম ঘুমের কারণে যেমন শরীর ক্লান্তি হয়ে পড়ে, ঠিক তেমনই কম খাওয়ার কারণেও শরীরে আসে ক্লান্তি। আবার ভুল খাবার খেলেও সমস্যা হতে পারে।
এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায় ও অলস অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তবে সুষম খাদ্য খেলে রক্তে শর্করাকে স্বাভাবিক পরিসরে রাখতে সাহায্য করে। যা শরীরের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
এজন্য নিয়মিত সকালের নাস্তা গ্রহণ করুন। প্রতিটি খাবারে প্রোটিন ও জটিল কার্বোহাইড্রেট অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ- বাদামি ব্রেডের সঙ্গে ডিম খান। দিনভর এনার্জি পেতে সারা দিন ছোট খাবার ও স্ন্যাকস খান।
রক্তস্বল্পতা
অ্যানিমিয়া নারীদের ক্লান্তির অন্যতম প্রধান কারণ। মাসিকেরে কারণে আয়রনের ঘাটতি ঘটতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতার জন্য, আয়রনের পরিপূরক গ্রহণ ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন- চর্বিহীন মাংস, লিভার, শেলফিশ, মটরশুটি খেলে রক্তস্বল্পতা কমতে পারে।
বিষণ্নতা
বিষণ্নতাকে আসলে একটি মানসিক ব্যাধি। তবে এটি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার লক্ষণ হিসেবেও দেখা যায়। ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও ক্ষুধা কমে যাওয়া বিষণ্নতার সাধারণ লক্ষণ।
যা আপনাকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। আপনি যদি একটানা কয়েক সপ্তাহের বেশি ক্লান্ত বোধ করেন তবে আপনার ডাক্তারকে দেখুন।
হাইপোথাইরয়েডিজম
থাইরয়েড হলো গলার একটি ছোট গ্রন্থি। এটি আপনার বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, যে গতিতে আপনার শরীর জ্বালানিকে শক্তিতে রূপান্তর করে।
যখন গ্রন্থিটি নিষ্ক্রিয় থাকে ও বিপাক খুব ধীরে কাজ করে, তখন আপনি অলস বোধ করতে পারেন ও ওজন দ্রুত বাড়তে পারে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
অতিরিক্ত ক্যাফেইনের আসক্তিও আপনাকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে। যা হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও অস্থিরতা বাড়ায়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ক্যাফেইন কিছু মানুষের মধ্যে ক্লান্তির সৃষ্টি করে।
এজন্য ধীরে ধীরে কফি, চা, চকলেট, কোমল পানীয় ও ক্যাফেইন আছে এমন যে কোনো ওষুধ গ্রহণে বিরত থাকুন। আবার হঠাৎ ক্যাফেইন গ্রহণ বন্ধ করলে আরও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। তাই দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করুন ক্যাফেইন।
লুকানো ইউটিআই
মূত্রনালীর সংক্রমণ বা (ইউটিআই) খুবই গুরুতর এক সংক্রমণ। দীর্ঘদিন এর চিকিৎসা করা না হলে কিডনিতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এই সংক্রমণ।
প্রস্রাবের এই সংক্রমণের কারণেও শরীরে দেখা দিতে পারে গুরুতর ক্লান্তি। অ্যান্টিবায়োটিক হলো ইউটিআইয়ের নিরাময়। এর সঠিক চিকিৎসা হলে ক্লান্তিও সপ্তাহখানেকের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস
কোনো কারণ ছাড়াই শারীরিক ক্লান্তি ডায়াবেটিসের লক্ষণও হতে পারে। আসলে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়।
ফলে পর্যাপ্ত খাবার থাকা সত্ত্বেও শরীরে বাষ্প ফুরিয়ে যায়। চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এমনকি এর থেকে মুক্তিও মেলে।
ডিহাইড্রেশন
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব ডিহাইড্রেশনেরও অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। তাই যত ব্যস্তই থাকুন না কেন পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কি না তা নিশ্চিত করুন।
ব্যায়াম করা এক ঘণ্টা আগে কমপক্ষে দুই গ্লাস পানি পান করুন। শরীরচর্চার ফাঁকে ফাঁকেও পানি পান করতে ভুলবেন না।
হৃদরোগ
দৈনন্দিন কাজকর্ম, সিঁড়ি ভাঙার সময় কিংবা ছোটখাটো পরিশ্রমেই আপনি হাঁপিয়ে ওঠেন ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে বুঝবেন আপনার হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করছে না। এমন সমস্যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: ওয়েব এমডি