থাইরয়েড আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেন ওজন বাড়ে?
হাইপোথাইরয়েডিজম হলো এমন একটি অবস্থা যখন শরীর যথেষ্ট থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। আর থাইরয়েড হরমোনই শারীরিক বৃদ্ধি, বিপাক ও বিভিন্ন সমস্যার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যাদের থাইরয়েডের গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না তাদের জন্য ওজন বেড়ে যায়। আর ওই অতিরিক্ত ওজন কমানো বেশ কষ্টকর হতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে ওজন বেড়ে যায় ক্রমশ। সেক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চলা জরুরি। না হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে।
থাইরয়েড আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেন ওজন বাড়ে?
হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে দ্রুত রোগ নির্ণয়ও গুরুত্বপূর্ণ। রোগ নির্ণয় করতে আপনার যত বেশি সময় লাগবে, তত বেশি ওজন বাড়তে পারে।
যাদের থাইরয়েডের অক্ষমতা আছে তাদের জন্য বিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়। আমাদের বিপাকীয় সিস্টেম স্বাস্থ্যকর শরীরের কার্যকারিতা ও ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষেত্রেও অবদান রাখে।
যদি আপনার বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা হয় বা ধীর বিপাকীয় হার থাকে, তাহলে সহজেই আপনি মুটিয়ে যেতে পারেন। এমন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন ঝরানোও কঠিন হতে পারে।
এমনকি হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলও বেড়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য খাদ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তাহলে থাইরয়েডসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকে সহজেই রক্ষা মিলবে।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাবার যেভাবে গুরুত্ব রাখে
সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার হরমোনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে ও থাইরয়েডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সঠিক খাবার খাওয়া, ব্যায়াম ও নির্দিষ্ট ওষুধ আপনাকে থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
যদি আপনার থাইরয়েড স্থিতিশীল থাকে ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় তাহলে ওজন কমানোও সহজ হবে। এক্ষেত্রে কিছু খাবার অবশ্যই পাতে রাখতে হবে আর কিছু করতে হবে বর্জন, জেনে নিন করণীয়-
আয়োডিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান
পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১/৩ অংশ আয়োডিনের ঘাটতিতে ভুগছে।
আয়োডিন একটি অপরিহার্য খনিজ, যা শরীরে থাইরয়েড ফাংশনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
আপনার যদি হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে তবে ডায়েটে অবশ্যই আয়োডিন যোগ করুন। যা শরীরে টিএসএইচ উৎপাদন বাড়িয়ে তুলবে। লবণ, মাছ, দুগ্ধজাত খাবার, ডিমের মতো খাবার নিয়মিত পাতে রাখতে ভুলবেন না।
ফাইবার থাকা গুরুত্বপূর্ণ
থাইরয়েড রোগীদের প্রচুর পরিমাণে ফাইবারজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। ফাইবার হজম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, খারাপ টক্সিন দূর করে ও ক্যালোরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর ফল, সবজি ও ডাল রাখুন।
সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
সেলেনিয়াম হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেস খনিজ, যা শরীরকে প্রচুর টিএসএইচ হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। আপনার ডায়েটে পর্যাপ্ত সেলেনিয়াম ফ্রি র্যাডিকেল দূর করতে সাহায্য করে, যা ওজন বাড়াতে অবদান রাখে।
কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী করতে পারে। ব্রাজিল বাদাম, সার্ডিন, ডিম ও বিভিন্ন ধরনের লেবুর মতো সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার পাতে রাখুন।
চিনি ও উচ্চ-কার্বযুক্ত খাবার কম খান
চিনি ও উচ্চ-কার্বস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। থাইরয়েডের রোগীরা ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ও উচ্চ কার্বজাতীয় খাবার কমিয়ে আনুন।
তার বদলে যোগ করুন গ্লাইসেমিক সূচক কম আছে এমন খাবার, যা ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় না।
অনেকে থাইরয়েডের রোগীরাই ওজন কমাতে প্যালিও ডায়েট বেছে নেন। যার মধ্যে কম চিনিযুক্ত, সম্পূর্ণ খাবারের ডায়েট অন্তর্ভুক্ত থাকে। একইভাবে কেটোজেনিক ডায়েটও এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী।
প্রদাহরোধী খাবার বাড়ান
থাইরয়েডের রোগীদের অটোইমিউন ফাংশন ঠিকমতো কাজ করে না, ফলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত হয় ও ওজন বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে প্রদাহবিরোধী বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ডায়েট ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী হতে পারে।
গ্লুটেন-মুক্ত খাবার বেছে নিন
অনেক গবেষণা গ্লুটেন সংবেদনশীলতা ও কিছু অটো ইমিউন অবস্থার মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। তাই গ্লুটেনমুক্ত খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়, যা হাইপোথাইরয়েডিজম পরিচালনায় ও ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
খাবারের সময় পরিবর্তন করুন
বিপাককে পুনরুজ্জীবিত করা ও চর্বি পোড়ার গতি ত্বরান্বিত করার একটি সহজ উপায় হলো খাবারের সময় পরিবর্তন করা। এক্ষেত্রে উপবাস বা ইন্টারমিটিং ফাস্টিং বেশ কার্যকরী।
বেশি পানি পান করুন
দ্রুত ওজন কমানোর জন্য হাইড্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখাও বেশ সহজ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে হজমের উন্নতি হয় ও শরীর থেকে টক্সিন দূর হয়। আবার আপনার ক্ষুধাও কমাতে পারে।
কোন খাবারগুলো এড়ানো উচিত?
অত্যধিক ভাত-রুটি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, সয়া, পীচ, নাশপাতি, স্ট্রবেরির পরিবর্তে ডিম, মাংস, মাছ, শাকসবজি, গ্লুটেন-মুক্ত শস্য ও বীজের মতো খাবার খান। এছাড়া দুগ্ধজাত ও নন-ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়ও পান করতে পারেন।
ওজন কমাতে কোন ব্যায়াম করবেন?
ব্যায়াম স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যায়াম শরীরের থাইরয়েডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে ও বিপাকীয় কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
আপনি যদি হাইপোথাইরয়েডিজমে ভোগেন ও ওজন কমাতে চান তাহলে দিনে অন্তত ১ ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। এক্ষেত্রে ওয়েট লিফটিং, মাসল বিল্ডিং এক্সারসাইজ, পাইলেট, হিট ও কার্ডিও বেশ কার্যকর হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া