যাদের ওপর হজ ফরজ

0

হজ শব্দের অর্থ হলো- ইচ্ছা করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় কাবা ঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান ইত্যাদি কর্মকাণ্ডকেই হজ বলা হয়। কিন্তু এ হজ কার ওপর ফরজ? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

হজ করার সামর্থ্য সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন-
وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا
‘আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৭)

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির জন্য শর্তসাপেক্ষে কাবা ঘরের হজ ফরজ করেছেন। শর্ত এই যে, এ ঘর পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য থাকতে হবে। কেমন সামর্থ্য থাকতে হবে?
সামর্থ্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ ঘরের উদ্দেশ্যে আসবে, তার কাছে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা সে কাবা ঘর পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়। এছাড়া কাবা ঘর থেকে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। আবার দৈহিক দিক থেকে হাত পা ও চোখ কর্মক্ষম হতে হবে। কারণ, যাদের এসব অঙ্গ বিকল, তাদের পক্ষে নিজ বাড়ি-ঘরে চলাফেরা করাই দুস্কর। হজের সফর তারা কীভাবে করবে?

সুতরাং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি, যে নিজ দেশ থেকে পবিত্র নগরী মক্কা পর্যন্ত যাতায়াত করতে সক্ষম এবং হজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত আপন পরিবার-পরিজনের আবশ্যকীয় ব্যয় বহন করতে পারবে, এমন সম্পদশালী পূর্ণবয়স্ক সুস্থ (বালেগ ও বিবেকবান) মুসলমানের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ।

যদি কারও জীবিকা নির্বাহের আবশ্যক পরিমাণ হতে অতিরিক্ত জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি বা আসবাবপত্র থাকে এবং তা বিক্রয় করলে হজের খরচ হয়ে যায়, তবে তার উপর হজ ফরজ হবে এবং অতিরিক্ত অংশ থেকে হজের খরচ পরিমাণ বিক্রয় করে হজ করতে হবে।

আরও যাদের হজ করতে হবে
যদি কারও কাছে এক বছরের খরচ পরিমাণ ধান বা অন্য ফসলাদি বাদে অতিরিক্ত ধান বা অন্য ফসলাদি থাকে এবং সেই অতিরিক্ত ধান বা অন্য ফসলাদি বিক্রয় করলে হজের খরচ হয়ে যায়, তবে উক্ত অতিরিক্তি পরিমাণ ধান বা অন্য ফসলাদি বিক্রয় করে তাকে হজ করতে হবে।

চিররোগী সম্পদের মালিক (ধনী) হলে তার ওপর হজ ফরজ হবে। অবশ্য রোগী যদি শেষ জীবন পর্যন্ত সুস্থ না হয় এবং সুস্থ হওয়ার আশাও না থাকে, তবে হজ করার জন্য অসিয়ত করে যাওয়া তার ওপর ওয়াজিব হবে। হজের জন্য অসিয়ত না করলে ওই ব্যক্তি গুনাহগার হবে।

কারো ওপর যে বছর হজ ফরজ হবে, সে বছর হজ করার ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। কোনো অজুহাতে দেরি করা মোটেও ঠিক নয়।

স্ত্রী/নারী যদি সম্পদের মালিক (ধনী) হয় তবে তার ওপরও হজ ফরজ। তার হজ করার জন্য সঙ্গী মাহরাম আবশ্যক। যদি জীবদ্দশায় মাহরাম স্বামী, বাবা, ছেলে বা কোনো দ্বীনদার পরহেজগার মাহরাম সঙ্গী না পায় তবে শেষ সময় বদলি হজের অসিয়ত করতে হবে। অন্যথায় গুনাহগার হবে।

সুতরাং হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজ করা আবশ্যক। অযথা দেরি করা মোটেই ঠিক নয়। হাদিসে পাকে এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে এভাবে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হজ সম্পাদন করার ইচ্ছা রাখে সে যেন যথা শিগগির তা আদায় করে নেয়।’ (আবু দাউদ)

মনে রাখতে হবে
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করাকে কোরআন ‘কুফরি’ (অস্বীকার) বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ থেকে হজ ফরজ হওয়ার এবং তা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সুতরাং হজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে যথা সময়ে ফরজ হজ আদায় করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদশালী ব্যক্তিকে যথাসময়ে হজ করার তাওফিক দান করুন। সবার জন্য হজে মাবরুর কবুল করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com