শরীক ছোট ছোট দলগুলোর সিদ্ধান্তহীনতায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে তেহরিকে ইনসাফ

0

শরীক ছোট ছোট দলগুলোর সিদ্ধান্তহীনতায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আহবান করা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে পিটিআইয়ের সঙ্গে শরীক ছোট ছোট চারটি দল, তবে জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার তারা। এই দলগুলো ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে। এ কারণে শুধু যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে তা নয়। একই সঙ্গে সরকারের স্নায়ুযন্ত্র বিকল হতে শুরু করেছে। তারা নির্ঘুম রাত পাড় করছে। অনলাইন ডন এ খবর দিয়ে আরও লিখেছে- এই বিষয়গুলো প্রামাণ্য হওয়া শুরু করেছে শনিবার।

এদিন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ অভিযোগ করেছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কিউয়ের (পিএমএলকিউ) বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা ভোট আহবান করেছে, সেই ইস্যুতে নিজেরা সমর্থন আদায়ের জন্য সরকারকে ব্লাকমেইল করছে পিএমএলকিউ। তার এমন বক্তব্যে মেজাজ বিগড়ে গেছে পিএমএলকিউয়ের নেতৃত্বের। সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন পিএমএলকিউ নেতা ও কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রী চৌধুরী মুনিস এলাহি। তিনি টুইটে অভিযোগ করেছেন যে, নিজের ছাত্রজীবনে দলীয় বড়ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিতেন বর্তমানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রশিদ আহমেদ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার কোয়েটায় সংবাদ সম্মেলনে ওইসব মন্তব্য করেন। এর আগে একইদিনে তিনি রাজধানী ইসলামাবাদে পরামর্শমূলক বৈঠক করেন পিএমএলকিউয়ের নেতাদের সঙ্গে। বৈঠকের পর ঘোষণা দেয়া হয় যে তারা দলীয় অবস্থান এবং কৌশল চূড়ান্ত করতে আজ রোববার আবার বৈঠকে বসবেন। এ অবস্থায় উভয় দলের মধ্যে যে শত্রু ভাবাপন্ন মনোভাব দেখা যাচ্ছে তা থেকে এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, ক্ষমতাসীন পিটিআই এবং পিএমএলকিউয়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। এই বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে, যখন গত শুক্রবার লোয়ার ডির-এ দেয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাষণের সমালোচনা করে পিএমএলকিউ। ইমরান খানের সেদিনের বক্তব্যের জবাবে পিএমএলকিউ সিনেটর কামিল আলি আগা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই আমরা। এটােেক আমরা লজ্জাজনক বলে মনে করি এবং এ ধরনের বক্তব্য একজন প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদার নিচে।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো পিএমএলকিউ। তারা জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব আমলে নেয়ার আগেই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি করেছে। তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী যেন চৌধুরী পারভেজ এলাহিকে নির্দেশ দেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টে ফেলতে। এ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। প্রভাবশালী ডন পত্রিকাকে আলি আগা বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যকার অবস্থা নিয়ে শনিবার বিস্তারিত বৈঠক করেছেন দলীয় নেতারা। আজ রোববার তারা আবারও বৈঠক করবেন। কিন্তু ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে কেন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আলি আগা বলেন, তার দলীয় নেতারা সব সময়ই শলাপরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তিনি আশা করেন, আজ রোববার তারা চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্তে যেতে পারবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আলি আগা মিডিয়ায় প্রচারিত খবর প্রত্যাখ্যান করেন যে, তাদেরকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ দেয়ার জন্য পিটিআইয়ে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী।

এরপরই পিএমএলকিউয়ের এই সিনেটর তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্ভট বলে দাবি করেন। বলেন, রাজনীতির এত গুরুত্বর বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি ফাওয়াদ চৌধুরী বলে তিনি মনে করেন না। তিনি আরও বলেন, শুক্রবার চৌধুরী পারভেজ ইলাহির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তথ্যমন্ত্রী। এতে এক দফা নিয়ে আলোচনা হয়। সেটা হলো প্রিভেনশন অব ইলেকট্রনিক ক্রাইম অ্যাক্ট। পিএমএলকিউকে টার্গেট করে মন্তব্য করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, দেখে মনে হচ্ছে মন্ত্রণালয় হারানোর আতঙ্কে আছেন রশিদ আহমেদ। তিনি আরও বলেন, রশিদ আহমেদকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। রশিদ আহমেদ অতীতে সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন তুষ্টি এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে।
পাকিস্তানে বর্তমানে যে রাজনৈতিক নাটক চলছে তাতে নিজেদের মাত্র ৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য থাকলেও এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে পিএমএলকিউ। অন্যদিকে জোটের অন্য শরিক মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি এবং গ্রান্ড ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সও সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছে। যদি জোটের এই চারটি শরিক দলের মধ্যে মাত্র দুটি দল ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন। এই চারটি জোটের মোট ১৭ জন সদস্যকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল পার্লামেন্টে ১৭৯ পার্লামেন্টারিয়ানের সমর্থনে ক্ষমতায় আছে।

ওদিকে এর আগে কোয়েটায় নাদ্রা মেগা সেন্টার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ। সেখানে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাশে তিনি পাথরের মতো অর্থাৎ অটলভাবে অবস্থান করবেন। তবে অন্য মিত্রদের দায় তিনি কাঁধে নেবেন না। এক্ষেত্রে যদি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে সরকারকে ব্লাকমেইলও করা হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com