ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সমালোচনায় মমতা
ত্রিশ বছর আমি সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। আমি জীবন্ত লাশ। এবারে যখন নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলাম, আমার ওপর আঘাত এসেছিল। পায়ে চোট নিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই দেড় মাস নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে বেড়িয়েছি আমি।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের প্রচারে চেতলার সভায় দেওয়া ভাষণে এভাবেই নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টানেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
সবশেষ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ‘হট স্পট’ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামে ভোটের প্রচারে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার অতীত সামনে এনে এ তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, নন্দীগ্রামে দরজাটা যেভাবে চেপে ধরেছিল, গলাটা কাটা যতো। পা-টা ঠিক হয়নি, কিন্তু জেদে চলি আমি। যেদিন থেকে বিজেপি এসেছে, সেদিন থেকেই ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি। ওরা একটা দানবীয় পার্টি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকে আমার তেমন কিছু নেই। এ দশ বছরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি যা পাই, সেটা নিলে দুই-আড়াই কোটি টাকা হয়ে যেতো। আর এরা (বিজেপি) আমার বিরুদ্ধে সিবিআই (ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা), ইডি (অ্যানফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) করে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকে ভাবে, এরা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেছে, তাই অনেক আনন্দে আছে। না বন্ধু না। এখন আমাকে সারাক্ষণ জেগে থাকতে হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমাদের করতে হয়।
মমতা ব্যানার্জী বলেন, আমি মরে যাবো, তবু যা কথা দিয়েছি সেটা করেই যাবো। আজ বাংলা এগিয়ে চলেছে।
দিল্লি নোটবন্দি করে টাকা আটকে রাখতে চায়। কিন্তু আমি চাই, টাকা যেন মার্কেটে ঘুরে। কারো কাছে কখনো ভিক্ষা চাইনি, মাথা উঁচু করেই চলেছি।
ভোটের প্রচারে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সমালোচনা করে ভবানীপুরের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিজেপি অনেক রকম চক্রান্ত করবে। আপনারা মাথা ঠান্ডা রেখে গণদেবতার পুজো শান্তিপূর্ণভাবে করবেন। প্রতিটি ভোটের মূল্য আছে। আপনারা যদি আমাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে দেখতে চান, তাহলে অবশ্যই ভোটটা দেবেন। এটা ভাববেন না যে, দিদি তো এমনিতেই জিতে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ভবানীপুরেও বহিরাগতরা এসে নির্বাচন করছে। বাংলার নির্বাচনের সময় যেভাবে সারাদেশ থেকে এসেছিলো, এখন ভাবছে ভবানীপুরেও তেমন হবে। আমি বলি, ভবানীপুরের মাটি তোমরা (বিজেপির প্রতি ইঙ্গিত করে) চেনো না।
ত্রিপুরায় মিটিং মিছিল করতে গেলে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ করে বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, তোমরা যে বলে বেরাচ্ছো, বাংলায় দিদি দুর্গাপূজা করতে দেয় না, তো তোমরা ত্রিপুরায় কী করেছো। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছো। তাহলে দূর্গাপূজা কীভাবে হবে? কালীপূজা কীভাবে হবে? দূর্গাপূজা, কালীপূজায় ১৪৪ ধারা করতে যেও না।
‘একজন কে এসেছে, (হরদীপ সিং পুরীকে উদ্দেশ্য করে) শুনলাম সে নাকি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী। তাকে জিজ্ঞাসা করবেন- গ্যাসের দাম এত কেন’- যোগ করেন তিনি।
বিজেপি সরকারের দিকে আঙুল তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তোমাদের ভয় পাই না, তোমরা আমাদের ভয় পাও।
উপস্থিত ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী দিন লড়ার প্রেরণা চাই। আপনারা প্রেরণা দিলে আমার লড়াই চলবে। ২০১৪ থেকে এ লড়াই চলছে। যতদিন না দিল্লির মাটি থেকে ওদের (বিজেপি) সরাতে পারছি, ততদিন এ লড়াই চলবে।
ভবানীপুরে বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনের পর অন্য রাজ্যগুলোতেও একইভাবে সক্রিয় হওয়ার আভাস দেন মমতা ব্যানার্জী।