আকীকার মাসআলা

0

আকীকা শব্দটি আরবী। এর শাব্দিক অর্থ হল, নবজাতকের মাথার জন্মালগ্নের চুল কামিয়ে দেয়া। আর ইসলামী শরীয়তে আকীকা বলতে নবজাতকের জন্মের পর তার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট জন্তু যবেহ করা। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম সুন্দর বিধান করেছে। শিশু জন্মের পর থেকে তার আকীকা দেয়া বিধানগুলোর মধ্যে একটি।

হাদীস শরীফে আকীকার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারীর হাদিসে আছে, ‘হযরত সালমান ইবনে আমের রা. বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানের সাথে একটি আকীকা নিবন্ধিত রয়েছে। সুতরাং তার পক্ষ হতে রক্ত প্রাবাহিত কর এবং আপদ-বিপদ দূরীভূত কর।’ (সহীহ বুখারী: ৫৪৭১, ২/৮২২)।

হাদিস শরীফে আরও বলা হয়েছে, ‘হযরত সামুরাহ ইবনে জুন্দুর রা. বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকীকার সাথে বন্ধনকৃত। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জন্তু যবেহ করবে এবং তার মাথার চুল মুণ্ডন করে নাম রাখবে।’ (সুনানে নাসায়ী: ৪২২০, ২/১৬৭)

আকীকার মাসআলা
উল্লেখিত হাদিসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত যে, আকীকা করা ওয়াজিব নয়, সুন্নত বা মুস্তাহাব। ছেলে অথবা মেয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর স্পতম দিবসে তার নাম রাখা এবং আকীকা করা সুন্নত। যদি কেউ সপ্তম দিনে আকীকা করতে অপরগ হয় তবে ১৪ অথবা ২১ তম দিনে এরূপ সাত দিন অন্তর যে কোনও দিনে আকীকা করা উত্তম। তবে প্রথম সাত দিনে করার যে সওয়াব রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

ভূমিষ্ঠ সন্তান ছেলে হলে তার আকীকা দুটি ছাগল অথবা দুটি ভেড়া, আর মেয়ে হলে একটি ছাগল বা একটি ভেড়া জবাই করা। আর কেউ যদি কোরবানির সাথে আকীকা সেরে নিতে চায়, তবে তা বৈধ হবে। যেহেতু কোরবানিতে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যই থাকে। তাই আকীকার কারণে কোরবানিতে কোনও সমস্যা হবে না। এখানে ছেলের জন্য দেুই শরীক ও মেয়ের জন্য এক শরীক রাখবে। কেউ অপরাগ হলে ছেলের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা ভেড়া অথবা গরুর এক অংশ দ্বারা আকীকা করা জায়েজ হবে। (সুনানে নাসায়ী: ৪৫৩১)

কোনবানিতে যেমন সাত অংশ থাকে, তেমনি আকীকাতেও সাত অংশ হতে পারে। (কিফায়াতুল মুফতী : ৮ নং খন্ড)। যে জন্তু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ, সেসব জন্তু দ্বারা আকীকাও জায়েজ। আর যে জন্তু দ্বারা কোরবানি হয় না, তা দ্বারা আকীকাও সহীহ হবে না। (বেহেশতি জেওড় : ৩ নং খন্ড)। আকীকার গোস্ত সন্তানের পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ও নানা-নানী এবং ভাই-বোন সকলে খেতে পারবে। এছাড়া কেউ যদি বড় হয়ে আকীকা দেয়, তাহলে সে নিজেও আকীকার গোস্ত খেতে পারবে।

তবে আকীকার গোস্তের এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের মাঝে বন্টন করা উত্তম। অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের খাওয়াতে পারবে। (কিফায়াতুল মুফতি : ৮ নং খন্ড)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com