মসজিদের অর্থ আত্মসাৎ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের অর্থ সম্পদ ও সরকারি অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম এনামুল করিম। আদালত গত ১ মার্চ মামলাটি আমলে নিয়ে দুদক মহাপরিচালককে (অনুসন্ধান ও তদন্ত) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও পৌরশহরের লঞ্চঘাট সড়কের বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারসহ বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, তার স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জান যায়, পেনাল কোড ১০৭, ১০৯, ১২০(ক), ১৬৭, ৪০৫, ৪০৬, ৪০৮, ৪০৯, ৪১৫, ৪২০, ৪৬৩, ৪৭৭(ক), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) এবং ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭ ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহআলম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শহিদুর রহমান জানান, ২নং আসামি কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র এস এম রাকিবুল আহসান দায়িত্বে থাকাকালীন এবং ১নং আসামি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান পরস্পর যোগসাজশে এবং একে অপরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বরাদ্দ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩০ হাজার টাকা মসজিদের উন্নয়নকল্পে গ্রহণ করেন। কিন্তু উক্ত টাকা মসজিদের অনুকূলে জমা না করে এবং কোনোরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/নগদ টাকা) কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে মাহবুবুর রহমান তালুকদার তার নির্বাচনী এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী-০৪ সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের অসমাপ্ত অংশ সমাপ্তকরণ ও মাঠ সলিং প্রকল্পের নামে ১ ও ২নং আসামি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে কোনোরূপ কাজ না করে এবং মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় সংসদ সদস্যের অনুকূলে দুইশ মেট্রিকটন খাদ্যশস্যের মধ্য থেকে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ’র অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ ও সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য ৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় যার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় ১৫,০০,০০০/- টাকা ছিল। উক্ত বরাদ্দকৃত ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য ১নং ও ২নং আসামি অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় মসজিদ অনুকূলে বিক্রিত অর্থ বা খাদ্যশস্য জমা না দিয়ে এবং কোনোরূপ উন্নয়ন কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের উন্নয়ন কল্পে বরাদ্দকৃত ২,৫০,০০০/- টাকা, ১ ও ২নং আসামি গ্রহণ করে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় উক্ত টাকার কোনোরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।
পটুয়াখালী জেলা পরিষদ থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের আবাসস্থল ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নের জন্য ৪,০০,০০০/- টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা মসজিদ কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মীর আবদুল বারেককে উত্তোলন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু উক্ত ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনোরূপ কাজ না করে ১ ও ২নং আসামি অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। এসব সরকারি অনুদানের স্মারক নম্বর, চেক নম্বর ও গ্রহণের তারিখ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ওয়াকফ্ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ এর ৫৬ (১) ধারা মোতাবেক মসজিদের কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে ওয়াকফ্ এর অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে ১১টি ছাপ কবলা দলিলের মাধ্যমে ১ থেকে ৫নং আসামি পরস্পর যোগসাজসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।