হঠাৎ গাঁজা নিয়ে ব্যস্ত ভারত সরকার
ভারতে সরকার এবং বিজেপির বিরোধীরা বলছেন, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটে রাজপুত ভোট টানতেই হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্র।
সেই তদন্তে, সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ আনা হয়েছিল সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্তকারী সংস্থা ইডি সেই অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে না পারায় তদন্তের ভার চলে গেল ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের হাতে।
তারই জেরে একে একে ডাক পড়লো অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন, সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কাপুরের। অভিযোগ, এরা সবাই গাঁজা এবং অন্যান্য মাদকের নেশা নিয়মিত করতেন। কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, কলাকুশলীরা যে গাঁজা, চরস, ইত্যাদি খান, সেটা কি এই প্রথম জানা গেল?
চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর যুক্ত ছিলেন অপর্ণা সেনের ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আয়ার’ ছবির সহ-পরিচালক হিসেবে। বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহর কথাও জানিয়েছেন অনিরুদ্ধ ধর, যিনি মজা করে বলতেন, গাঁজা না খেলে ভালো অভিনয় করা যায় না।
কিন্তু চলচ্চিত্রের জগতে গাঁজা-চরসের পিছনে পড়ে যাওয়ার অন্য কারণও আছে মনে করেন অনিরুদ্ধ। তার কথায়, ‘‘নেশা করে তারা যে মারাত্মক একটা কিছু করেন, দেশ বিরোধী কিছু করেন, তা তো নয়! কিন্তু তা হলে তাদের এরকম শাস্তি দেওয়া হচ্ছে কেন? আমার মনে হয়, এটার পিছনে একটা উদ্দেশ্য আছে।
যেমন কিছুদিন আগে দীপিকা পাডুকোন জেএনইউ-তে গিয়েছিলেন। তাকে একটা শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপার ছিল। এভাবে, যারাই সরকার বিরোধী কিছু কথা বলছেন, যারাই সরকারবিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন, তাদেরকে একটা ইঙ্গিত দেওয়া, যে, এইসব করলে তোমাকে খুনখারাপির চার্জে তো ফেলা যাবে না, কিন্তু নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে দেবো!’’
সুশান্ত সিংয়ের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় এখনো পর্যন্ত প্রধানত নারীদেরই বেশি জেরার সামনে পড়তে হচ্ছে। মাদক নেওয়ার প্রশ্নেও অভিযুক্ত মূলত নারীরাই। রিয়া চক্রবর্তী থেকে দীপিকা পাডুকোন, সবাই অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের একাংশ তুলে ধরছে।
অভিনেত্রী গুলশনারা খাতুন মনে করেন, এর পিছনে পুরুষতন্ত্রের চিরকালীন রাজনীতি কাজ করছে। দীপিকাকে ডেকে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর জেরার দিন, তার পক্ষে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন গুলশনারা। গণ হারে রিপোর্ট করে সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে।
গুলশনারার সোজা কথা, ‘‘বিজেপি, আরএসএস যে ভারতমাতার রূপটি তুলে ধরে, তা পুরুষতন্ত্র যেভাবে মেয়েদের দেখতে চায়, সেই ছাঁচেই। এবং এই ছাঁচেই বিশ্বের প্রতিটি নারী পড়বে, এটাই তারা প্রমোট করতে চায়, তারা বিশ্বাস করে এবং এটাই তাদের প্রচার। এই ছাঁচের বাইরে যখনই কোনো মেয়ে এই চরিত্রের বাইরে অন্যরকম একটি চরিত্র হয়ে ওঠে, যা তাদের পুরুষতন্ত্রের বিরোধী, বা তাদের তৈরি করে দেওয়া যে সামাজিক রীতিনীতি, তার বিরোধী, তখনই তাকে রাজনৈতিক দিক থেকে এবং রাষ্ট্রনৈতিক দিক থেকে অপমান করার একটা প্রয়াস চলতে থাকে। এই প্রয়াস ভীষণভাবে রাজনৈতিক এবং পুরুষতান্ত্রিক।’’ ডয়চে ভেলে