হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের রোগীদের কী করা উচিত
করোনাভাইরাসের থাবা এখন সর্বগ্রাসী। তবে ভয় পাবেন না। করোনা থাবা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে লকডাউনের যে নির্দেশ কঠিনভাবে মেনে চলুন। করোনায় আক্রান্ত হয়েও সুস্থ জীবনে ফিরে আসা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ করোনায় মৃত্যুর হার কম। তবে রোগ চেপে যাবেন না। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। রোগী আতঙ্কিত হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজটা কঠিন হয়। আবার বলছি, নির্দেশ মেনে চললে করোনাকে মোকাবিলা করা মোটেই কঠিন নয়।
বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে প্রায় ২৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যারা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের রোগী, তারা সতর্ক থাকলে অনায়াসেই এড়িয়ে যেতে পারবেন করোনার বিপদ। মাথায় রাখবেন, এটা সিজিন চেঞ্জের সময়। প্রতি বছর এই সময় হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের রোগের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। তার জন্য চিকিৎসকরা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ বা ইনহেলার দিয়ে রাখেন। সেই সমস্ত ওষুধ ঠিকমতো খাবেন এবং ব্যবহার করবেন। কোনো ওষুধ এই সময় বাদ দেবেন না। তবে, একথা কথা বলতেই হবে, অসতর্ক হলে এই ধরনের রোগীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকাই কাম্য।
গরম পড়েছে। তাই হুটহাট করে এসি চালিয়ে বসবেন না। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম বা ঠান্ডা পানীয় মোটেই ছোঁবেন না। মে মাসের আগে এসি এড়িয়ে চলুন। যত গরমই লাগুক না কেন, দিনে একবারের বেশি গোসল করবেন না। এখন মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বৃষ্টিতে ভিজবেন না।
যারা হাঁপানির রোগী তাদের যদি কোনো কারণে উপসর্গ বাড়ে তাহলে ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপাতত চেম্বার এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ চেম্বারে বিভিন্ন ধরনের রোগী যাচ্ছেন। তার সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীও থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হাঁপানি রোগীদের বিপদ হতে পারে। তাই ফোনই ভালো। তবে রোগের উপশম না হলে চিকিৎসকের ফাঁকা সময় জেনে নিয়ে চেম্বারে যান। জ্বরের সঙ্গে চার পাঁচ দিনের কাশি এবং বুকে ব্যথা থাকলে একদম অবহেলা করবেন না। অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যাবেন।
করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বের কাছে নতুন হওয়ায় এর প্রকৃতি এবং আচরণ একেবারেই অজানা। সেটা অবশ্যই চিকিৎসক এবং সাধারণ মানুষের কাছে চিন্তার কারণ। কিন্তু, আতঙ্কের নয়। আতঙ্কিত হলেই ভুলভাল পদক্ষেপ করার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাজার থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। এটা একদম করবে না। এতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এই অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া মানে বিষ খাওয়ার শামিল।
আরও একটা ব্যাপারে সতর্ক করা দরকার। লকডাউন মানতেই হবে। দেশ এবং রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য অনেক পরিকল্পনা করেই এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত। নিজেদের দূরে রাখাই এখন করোনার সব চেয়ে বড় মেডিসিন। তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। যদি যেতেই হয় তাহলে পরিবারের একজনই বাইরে যান। ঘুরে ফিরে পালা করে যাবেন না। তাতে সকলেরই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আর যিনি বাইরে যাবেন তিনি বাড়ি ফিরেই হাত, পা সাবান দিয়ে ভালো করে ধোয়ার পাশাপাশি জামাকাপড়টাও বদলে ফেলবেন। আর একটা কথা, ঘরে ও বাইরে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স বজায় রাখবেন। আড্ডা একদম নয়। তারজন্য অনেক সময় পড়ে আছে।
(প্রফেসর, চেস্ট মেডিসিন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল)