আমার ছেলে অন্যায় করেনি, তাকে মুক্তি দিন: সাংবাদিক তানুর মা
ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (আইসিটি অ্যাক্ট) মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর মুক্তি চেয়েকান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা আবু তাহের (৬০) ও মা রানী আখতার (৫২)।
রোববার (১১ জুলাই) ঠাকুরগাঁও আদালত চত্বরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এরআগে শনিবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কোর্ট চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানুর মা রানী আখতার বলেন, আমার ছেলে কোনো অন্যায় করেনি। সে সৎপথে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছে। একটি সত্য সংবাদ প্রকাশ করে যদি আমার ছেলেকে জেলে যেতে হয় এর থেকে বড় কষ্ট নেই। আপনারা সকলে আমার ছেলেকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিন। সারাদেশের সাংবাদিকের কাছে আমার দাবি আমার ছেলের জন্য কিছু করুন।
সাংবাদিক তানুর বাবা আবু তাহের বলেন, আমার ছেলে বেশ কিছুদিন ধরেই করোনায় আক্রান্ত। কয়েকদিন আগে সে সুস্থ হয়েছে, এখনও দুর্বলতা কাটেনি। একজন সাংবাদিককে যদি সত্য প্রকাশের জন্য জেলে যেতে হয় তাহলে দেশে সাংবাদিকতা কী অবস্থায় দাঁড়িয়েছে দেখুন।
এদিন তানভীর হাসান তানুকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তানুকে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ–পরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে বরাদ্দের বিপরীতে রোগীর খাবার পরিবেশনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে তানুসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা দায়ের করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজের দায়ের করা এ মামলায় তানু ছাড়া বাকি যে দুজনকে আসামি করাহয়েছে, তারা হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোরডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘গত জুন মাসে ২/১ দিন খাবার সরবরাহে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেও অন্যান্য সময় সরকারি বরাদ্দ মোতাবেক যথাযথ ভাবে রোগীদের খাবার প্রদান করা হচ্ছে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দাবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি হাসপাতালে খাবার সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাসপাতালের পাচক (বাবুর্চি) ও রোগীদের খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছেন।
অর্থাৎ সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি খোঁজ–খবর নিয়েছেন এবং তার দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লিখিত হাসপাতালে ‘দু–একদিন খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর তথ্য জানতে পেরেছেন। অথচ ‘খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
এদিকে তানুকে গ্রেফতারের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তি দাবিতে এবং মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সামাবেশ করেন সাংবাদিকরা। তারা তানুর মুক্তি ও সাংবাদিকদের নামে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এছাড়া তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতারের ঘটনায় সর্বস্তরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তানুর মুক্তির দাবিতে এবং মামলা প্রত্যাহারচেয়ে জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকথেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ফেসবুক পোস্ট করে নিন্দা জানাচ্ছেন।