বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত
বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তখন জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো। একদিকে মুজিব বর্ষ উৎযাপন। অন্যদিকে উৎসবের চাইতে করোনার প্রস্তুতির তাগিদ। যে-ই উৎসবের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তাকেই আমরা বঙ্গবন্ধু বিরোধী তকমা দিলাম! এভাবেই সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়টায় জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো বঙ্গবন্ধুর পক্ষ-বিপক্ষ দ্বন্দ্বে!
মার্চের ১৭ তারিখের পর করোনার সচেতনতা শুরু হতে না হতেই। একদিকে বিমানবন্দরে কোনরকম পরীক্ষা ছাড়াই ঢুকতে দেয়া হলো অসংখ্য প্রবাসীকে। অন্যদিকে জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো প্রবাসী- ননপ্রবাসী দ্বন্দ্বে!
করোনার প্রকোপ যখন বাড়তে থাকলো। তখন কিট, পিপিই আর চিকিৎসা সুবিধাবঞ্চিত হাসপাতালে ডাক্তাররা নিজেদের সুরক্ষা চাইলো। আর তখনই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো ডাক্তার-রোগী দ্বন্দ্বে!
মানুষ সামাজিক দূরত্ব যখন মানছে না। তখন সবাই বললো ‘পুলিশ কেন পেটায় না’। পুলিশ যখন পেটালো। সবাই তখন খুশিতে ট্রল করলো ‘পুলিশ টস জিতে ব্যাটিং এ নেমেছে’। আবার বলা শুরু হলো, পুলিশ কেন নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে। এভাবেই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো পুলিশ-নাগরিক দ্বন্দ্বে!
এরপর প্রশাসনকে নামিয়ে দেয়া হলো মাঠের কঠোর অবস্থানে। যশোরের মনিরামপুরের নির্বাহী কর্মকর্তার অমানবিক নিষ্ঠুর কর্মকান্ডে পুরো প্রশাসনকে দোষী বানানোর চেষ্টা করা হলো। জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো আমলা-জনতা দ্বন্দ্বে!
একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে প্রতিদিন টিভিতে হাজির করে মিথ্যা পরিসংখ্যান দেয়া শুরু করা হলো। সরকার কিংবা প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিংবা সরকারী দলের কেউ এই মিথ্যা পরিসংখ্যানের আপডেট দিলো না! সরকার বা সরকারী দলের কেউ কোন দায়দায়িত্ব না নিয়ে প্রশাসনের কাঁধে সমস্ত মিথ্যার দায় চাপিয়ে দিলো। আর এভাবেই জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হলো মীরজাদি-জনগণ দ্বন্দ্বে!
সরকার সবকিছু ছুটি দিয়ে দিলো। কিন্তু অভুক্ত মানুষের দায় নিলো না। কর্মহীন মানুষের অর্থের কোন যোগান দিলো না। আর এভাবেই জনগণের উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে জাতিকে এখন বিভক্ত করে রাখা হচ্ছে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্বে!
এটাই ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’! সরকার যখন ব্যর্থ। তখন শাসনের একমাত্র হাতিয়ায় হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে একপক্ষের বিরুদ্ধে আরেক পক্ষকে লেলিয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে রাজসিংহাসনে কোন আঁচড় লাগতে না দেয়া।
কথাগুলো বললাম এ কারনে যে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কোয়ারেন্টাইন এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। এবার অন্তত সাবধান হই। আমরা যেন কোনভাবেই এই মহাদূর্যোগের সময় আর বিভক্ত না হই। যেকোন মূল্যে জাতীয় ঐক্য এখন সবচাইতে বেশী প্রয়োজন। তাই, এবার অন্তত আমরা যেন আর জাতিকে বিভক্ত করে সেনাবাহিনী-জনতা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়ি।