গরিবের পেটে ভাত না দিয়ে পিঠে লাঠি কেন?

0

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ঠেকানোর নামে সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষ তথা-রিকশা চালক, ভ্যান চালক ও দিনমজুরদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ শুরু করেছে সরকার। করোনার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ। সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। ক্ষমতাসীনরা লকডাউনের ঘোষনা না দিলেও সারাদেশে এখন অঘোষিত লকডাউন চলছে। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যে চরম সংকটে পড়েছে নিম্ন আয়ের এসব মানুষ।

পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার তাকিদেই নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে রিকশা ও ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। রিকশা নিয়ে বের না হলেও এসব পরিবারের লোকদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। সরকার সব কিছু বন্ধ করে দিলেও তাদের জন্য কোনো প্রকার ব্যবস্থা করেনি।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-হতদরিদ্র মানুষগুলো রিকশা ভ্যান নিয়েও রাস্তায় নামতে পারছে না। রাস্তায় আসলেই পুলিশ তদেরকে পেটাচ্ছে। কারো কারো রিকশা ভ্যান নিয়ে যাচ্ছে। আবার রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। কোনো কোনো জায়গায় আবার রিকশা ও ভ্যান চালকদেরকে রাস্তায় মাঝখানে দাড় করিয়ে মানুষর সামনে কানধরে উঠবস করাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় রিক্সা চালিয়ে রোজগার করেন বৃদ্ধ জমির উদ্দিন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বয়সের ভারে তিনি খুব বেশি পরিশ্রম করতে পারেন না। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে তিনি যা উপার্জন করেন তা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। তিন সন্তানের জনক জমির উদ্দিনের বড় ছেলে স্থানীয় একটি মটর গ্যারেজে সামান্য মজুরীতে কাজ করেন। অন্যান্য সন্তানেরা এখনও উপার্জনক্ষম নয়। নিজের ও বড় পুত্রের উপার্জন মিলিয়ে বস্তিতে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকা খাওয়ার খরচ বহন করা দিন দিন অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তারমধ্যে দেশের এই ক্রান্তিকালে সবাই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় বড় ছেলের আয়ও বন্ধ। এখন রিক্সা নিয়ে না বের হলে না খেয়ে দিন পার করতে হবে তাদের।

তিনি বলেন,‘বড় লোকেরা গাড়ি নিয়ে বের হয়না তাই বড় ছেলের গ্যারেজে ইনকাম নাই। আমি একটু রাস্তায় বের হমু তা আবার পুলিশ পিটায়! কই যামু! আমরা কি না খেয়ে মরমু?’

ধানমন্ডি এলাকায় রিক্সা চালক রফিক। নিজের স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে রায়ের বাজার বস্তিতে থাকেন। প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। পুলিশের পিটুনির ভয়ে দুদিন বের হতে পারেননি তিনি। কিন্তু রাতের খাবার জোগাড় করতে ইচ্ছে না থাকার শর্তেও বেরিয়ে পড়েন। বের হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বের না হলে খাবো কি? আমরা কি না খেয়ে মরব? সরকার আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা না করে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে কেন?

গরিব মানুষদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরিব মানুষদের ওপর র‌্যাব-পুলিশের নির্যাতনের ছবিগুলো দেখে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।

অনেকেই বলছেন, গরিব মানুষদের জন্য কোনো ব্যবস্থা না করেই সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তাদের পেটে ভাত না দিয়ে শেখ হাসিনা তাদের পিঠে লাঠি মারছে। দেশের নাগরিকদের প্রতি ন্যূনতম ভালবাসা থাকলে একটা সরকার গরিব মানুষদের কখনো এমন অমানবিক আচরণ করতে পারে না।

এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনেও তিনি গরিবদের জন্য জন্য না করে শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্যাকেজ ঘোষনা করেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।’

শেখ হাসিনার এই বক্তব্যেরও কঠর সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যে দেশের মন্ত্রীদের কাছে হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি বড় অঙ্কের মনে হয় না সেদেশের মানুষের জন্য এমন তহবিল অপ্রতুল। শুধু তাই নয় এই তহবিল ঘোষনা করা হয়েছে শুধুমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার জন্য। সে দেশে গরিবের পিঠে লাঠি মারাই একমাত্র অবলম্বন।

তারা বলছেন, মুজিববর্ষের নামে বিভিন্ন ব্যাংক গুলো থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনা চাইলে এই অর্থ দিয়ে গরিবদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারে। এছাড়া গত কয়েক মাসে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন অভিযানের নামে যেসব অর্থ সংরক্ষণ করেছে সে অর্থগুলো দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকালে জনগণের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com