গোশত খাওয়ার পর চা খাওয়া কি ঠিক : স্বাস্থ্যবিষয়ক ১০ টিপস
সম্পৃক্ত চর্বি খেলে কি হার্ট অ্যাটাক হয়?
হ্যাঁ, সম্পৃক্ত চর্বি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং এটা হার্ট অ্যাটাকের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সাধারণভাবে প্রাণীর চর্বিতে অধিক পরিমাণ সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে। যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে গরুর গোশত, শূকরের মাংস, দুধজাত পণ্য যেমন- মাখন, পনির প্রভৃতি।
শরীরের জন্য উৎকৃষ্ট চর্বি কী?
ভোজ্যতেলই হচ্ছে শরীরের জন্য উৎকৃষ্ট চর্বি। ভোজ্যতেলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড, যা একটি অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। এর কাজ হলো পাচক রস নিঃসরণ, শারীরিক বৃদ্ধি সাধন, ত্বকের অখণ্ডতা রক্ষা, রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয় প্রভৃতি। অথচ প্রাণিজ চর্বি যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, গোশত, ডিম, ঘি, মাখনের চর্বিতে থাকে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যা বয়স্কদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগ, উচ্চ রক্ত চাপের মতো কিছু জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে। ভোজ্যতেল অর্থাৎ সূর্যমুখী তেল, সর্ষের তেল, বাদাম তেল, কার্পাস বীজ তেল প্রভৃতির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো এগুলোতে থাকে ভিটামিন-ই, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে যেমন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার শক্তি বাড়াতে, চোখের ছানি সৃষ্টি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে, প্রজনন সম্পর্কিত সমস্যার উন্নতিতে, শরীরে বার্ধক্যের ছাপ আসতে দেরি করার কাজে ভূমিকা রাখে।
মানসিক চাপে কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে?
হ্যাঁ। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই মানসিক চাপের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলাদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপের ফলে তাদের রক্তে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
গোশত খাওয়ার পর চা খাওয়া কি ঠিক?
গোশত খাওয়ার পর চা বা কফি কোনোটাই খাওয়া উচিত নয়। চা ও কফিতে থাকে ‘ট্যানিন’ নামক এক ধরনের উপাদান, যার কাজই হলো আয়রন বা লৌহের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয়া। গোশত খাওয়ার পর চা বা কফি খেলে গোশতের আয়রন শরীরের কাজে আসতে পারে না।
খাবারে হলুদ মেশানো কতটুকু যুক্তিপূর্ণ?
হলুদ হলো ব্যাকটেরিয়াবিরোধী এক প্রাকৃতিক উপাদান। খাবারে হলুদ মেশালে তা শুধু সেই খাবারের স্বাদ ও গন্ধই আনে না, বরং খাবারের মধ্যে অবস্থিত বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। গবেষকরা খাদ্যে হলুদের সাথে রসুন মেশানোার কথাও বলছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এ মিশ্রণটি খাদ্যে অবস্থিত ৯০ শতাংশই কলাই নামক ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। এ ব্যাকটেরিয়া মানুষের পেটের পীড়া ঘটিয়ে থাকে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য ম্যাগনেসিয়াম কতটুকু উপকারী?
বিভিন্ন অসুখে ম্যাগনেসিয়াম চমৎকার ফল দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের হৃদরোগ, অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা রোগ এবং ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন স্বল্পমাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করেন তা হলে ওই সব রোগের জটিলতা থেকে তারা রক্ষা পেতে পারেন। পালংশাক, শিম, বাদাম ও খাদ্য শস্য থেকে আপনি দৈনিক ৩২০ মিলিগ্রাম এ খনিজ উপাদানটি পাবেন।
গোল আলুর চেয়ে কি মিষ্টি আলুর পুষ্টি বেশি?
হ্যাঁ। গোল আলু ও মিষ্টি আলুতে প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় সমান থাকলেও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ মিষ্টি আলুতে অনেক বেশি। চর্বি ও খনিজ পদার্থও মিষ্টি আলুতে বেশি থাকে। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বেশি। লৌহ ও তুলনামূলক কম নয়। ভিটামিন-সিও রয়েছে প্রচুর। তাই তুলনামূলক গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলু বেশি পুষ্টিমাণে সমৃদ্ধ।
মা-বাবার অ্যাজমা থাকলে কি সন্তানেরও অ্যাজমা হবে?
একসময় এ কথাটি পুরোমাত্রায় চালু থাকলেও গবেষণায় দেখা গেছে একজন অ্যাজমা রোগী যদি অ্যাজমামুক্ত কাউকে বিয়ে করেন তা হলে তাদের সন্তানের অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ। আর একজন অ্যাজমা রোগী যদি অন্য একজন অ্যাজমা রোগীকে বিয়ে করেন তা হলে তাদের সন্তানের অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ। সত্যিকার অর্থে মা-বাবার জীবনযাপন পদ্ধতি অ্যাজমা হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেসব মা গর্ভাবস্থায় ধূমপান করেন তাদের সন্তানের অ্যাজমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া বদ্ধ ঘর, ধোঁয়া, সেন্ট প্রভৃতি অ্যাজমার কারণ।
অ্যাজমা রোগীর কি ব্যায়াম করা ঠিক?
ব্যায়াম করলে শরীরের সহ্যক্ষমতা বেড়ে যায়, বাড়ে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। ব্যায়াম করলে ফুসফুস সবল হয়, অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারী ব্যায়াম শুরু করলে হিতে বিপরীত হয়। তাই অ্যাজমা রোগীকে ধীরে-সুস্থে ব্যায়াম করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ব্যায়ামের ধরন ঠিক করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা হলে কি ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে?
অবশ্যই। গবেষকরা বলছেন, যেসব গর্ভবতী মহিলা অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি ইনহেলার ব্যবহার না করেন তা হলে গর্ভস্থ শিশুর জীবন মারাত্মক বিপদের মধ্যে থাকে। অ্যাজমার আক্রমণ ঘটে তখনই যখন ব্রঙ্কাসের দেয়ালের পেশিগুলোর সঙ্কোচন হয় ও এর ফলে ব্রঙ্কাসে আংশিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্টে তখন জীবন-মরণ সমস্যা। শ্বাসনালীর রুদ্ধতার ফলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহও কমে যায়। বিপদ শুধু মায়ের হয় না- সন্তানকেও আঁকড়ে ধরে। এ সময় স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করলে গর্ভবতী মহিলার ফুসফুসের বাতাস সরবরাহকারী নালীগুলো উন্মুক্ত হয় এবং সেই সাথে রক্ষা পায় মা ও শিশুর জীবন। তাই গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা আক্রান্ত হলে ইনহেলারের বিকল্প নেই।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।