ঘুম থেকে উঠে পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা
পানির অপর নাম জীবন। কারণ, মানবদেহের আকারের সাপেক্ষে তাতে ৫৫%-৭৮% পানি থাকে। সক্রিয় থাকার জন্য এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মানবদেহের প্রতিদিন এক থেকে সাত লিটার পানির প্রয়োজন হয়।
দেহের প্রয়োজনীয় পানির প্রকৃত পরিমাণ নির্ভর করে কাজকর্মের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ইত্যাদি নানা পরিস্থিতির উপর। তাই সকালে উঠেই আগে এক গ্লাস পানিখাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাহলে জেনে নিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা আছে কেন।
পানির উৎস্য
পানি হলো একটি অজৈব, স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন এবং প্রায় বর্ণহীন এক রাসায়নিক পদার্থ, যা পৃথিবীর বারিমণ্ডলের ও যে কোন জীব-কোষ বা উদ্ভিদ-কোষের একটি প্রধান উপাদান। যদিও পানি কোন প্রাণী বা উদ্ভিদকে কোন রকমের শক্তির বা জৈব পরিপোষকের যোগান দেয় না, তবু এখনও পর্যন্ত আমরা যা জানি, তাতে সমস্ত ধরনের প্রাণের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। এই জন্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার আগে প্রথমে সেখানে পানির অস্তিত্ব খোঁজেন। কারণ, এখনও মোটামুটিভাবে মনে করা হয় যে, পানি যদি না থাকে, তাহলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
পানিশুন্যতা
একজন স্বাস্থ্যবান মানুষের ঠিক কত পরিমাণ পানির দরকার তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা না গেলেও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মত প্রকাশ করেছেন যে শরীর সুস্থ রাখতে মোটামুটি প্রতিদিন ২ লিটার (৬ থেকে ৭ গ্লাস) পানির প্রয়োজন। আমাদের শরীরের দুটি কিডনির কাজ হল শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়া। আর তার জন্য শরীরের যথেষ্ট জলের প্রয়োজন। এর মধ্যে যে ৬-৭ ঘণ্টা আপনি ঘুমিয়ে থাকেন তখনও কিন্তু দেহের এই ক্রিয়া-বিক্রিয়া থেমে থাকে না। ফলে খরচ হয়ে যায় অনেক তরল। আর সকালে আমরা সেই পানির অভাব নিয়েই জেগে উঠি। তাই ঘুম থেকে উঠেই পানির শরণাপন্ন হওয়া অনেক জরুরি। এতে আমাদের দেহের পানির অভাব অনেকটাই দূর হবে। তবে এর সঙ্গে সময়ের কোনও সম্পর্ক নেই। সকালে হোক বা একটু বেলায় জলের ঘাটতি যেন শরীরে না থাকে।
ওজন কমবে
কষ্ট করে না খেয়ে থেকে ওজন কমানোর বদলে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার এবং সাথে সকালবেলা খালি পেটে এক গ্লাস পানি – সহজ এবং উপকারি। পানি বেশি করে খেলে ক্যালোরি ইনটেক কম হয়। কারণ শরীরে জলের ঘাটতি না থাকলে চট করে ক্ষিদে পায় না। তাই যারা ওজন ঝরানোর চেষ্টা করছেন, তাদের সকালে উঠেই পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার অন্যতম কারণ পানিস্বল্পতা। সারা রাত ঘুমনোর কারণে সকালে আমাদের শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেয় বলে অনেকেই মনে করেন। সেই কারণে, সকালের প্রথম ইউরিন গাঢ় রঙের হয়। তবে এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। ইউরিনের রং সব সময় শরীরে জলের পরিমাণ বোঝায় না। ফলে হজম প্রক্রিয়ার সচলতা কমে যায়। তাই সকালে উঠে এক গ্লাস পানির মাধ্যমে প্রতিদিন আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সচল করে নিতে পারেন। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয় থাকবে না। আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও কমে যাবে অনেকটা।
সকালে উঠেই যে জল খাওয়া খুব জরুরি, এমন কোন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। তবে সকালে উঠে জলপানের মধ্যে কোনও খারাপ দিক নেই। তাই এই অভ্যাস আপনার থাকলে, আপনি তা চালিয়ে যেতেই পারেন এমনটাই জানাছেন গবেষকরা। শরীরে গ্রহণ করা পানির মোট পরিমাণের অধিকাংশই সরাসরি পানি পান করার পরিবর্তে আসে বিভিন্ন খাদ্য এবং অন্যান্য পানীয় থেকে।
জীবজগতে পানির প্রভাব অপরিসীম ৷ পানি ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতো না ৷ এছাড়াও মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজনীয় পদার্থ হল পানি ৷ একজন মানুষ পানি ছাড়া গড়ে মাত্র তিন দিন বেচে থাকতে পারে ৷