রোগ সারাতে সহায়তা করে সুগন্ধ
চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুগন্ধের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। ক্যানসার থেকে শুরু করে স্মৃতিভ্রংশের রোগীরা অ্যারোমা থেরাপির ফলে সুফল পাচ্ছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে নার্স হিসেবে কাজ করছেন বিয়াংকা ব্রাউন। তিনি মনে করেন, গন্ধ অসুস্থ মানুষের সহায়তা করতে পারে। ড্রেসডেন শহরে বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তিনি অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন বিভাগে সক্রিয় রয়েছেন। ক্যানসার রোগীদের বেশ কয়েক সপ্তাহ সেখানে কাটাতে হয়। বিয়াংকা বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে এমন উচ্চ প্রযুক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে কাজ করছি। সব সময় আমার মনে হয়েছে যে, রোগীর পরিচর্যা, চিকিৎসা ও ওষুধপত্র সত্ত্বেও কোনো কিছুর যেন অভাব রয়েছে। তখন অ্যারোমাথেরাপি ও সুগন্ধের ভিত্তিতে পরিচর্যার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে অন্যভাবে রোগীদের পরিচর্যা করা যায়। নিয়ম মেনে হাতেকলমে রোগীর পরিচর্যার তুলনায় সুগন্ধের সাহায্যে আরো বেশি সুফল পাওয়া যায়।’
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সুগন্ধের সাহায্যে পরিচর্যাকে কি চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে আদৌ কোনো গুরুত্ব দেওয়া যায়? বোখুম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হান্স হাট তা-ই মনে করেন। কয়েক দশক ধরে তিনি সুগন্ধ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিজ্ঞান এতটাই অগ্রসর হয়েছে যে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে সুগন্ধের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, ভ্যানিলার সুগন্ধের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। মায়ের পেটে থাকতে ভ্রূণ হিসেবেই গন্ধের স্মৃতি তৈরি হয়। মা ভালো ভ্যানিলা কেক খেলে সঙ্গে হয়তো পারিশ্রমিক হিসেবে কিছুটা চিনিও পাওয়া যায়। কেক খেয়ে মায়ের সুখের অনুভূতি হলে পেটের সন্তানও সেই গন্ধ পায়। অর্থাৎ, জন্মের আগে থেকেই আমরা জানি যে, ভ্যানিলার গন্ধ ভালো। আমাদের মস্তিষ্কে সেই গন্ধ ইতিবাচক সাড়া জাগায়।’
নানা পথে সুগন্ধ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এ বিষয়ে সুগন্ধী গবেষক হান্স হাট আরো বলেন, ‘যেমন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় ফুসফুসের মাধ্যমে গন্ধ প্রবেশ করে। অথবা ত্বকের উপর গন্ধ মাখালেও সেটা ঘটে। খাবার সময় তো অবশ্যই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর মাধ্যমে গন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে গন্ধের অণু রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে গন্ধের সেন্সর রয়েছে। গন্ধ নেবার জন্য নয়, বরং গন্ধের প্রভাব তরান্বিত করতেই সেগুলি রয়েছে। যেমন ল্যাভেন্ডার গ্রহণ করলে সেটির উপাদান রক্তের মধ্যেও পাওয়া যায়। মস্তিষ্কে ভ্যালিয়ামের মতো রিসেপ্টরের উপর তা প্রভাব ফেলে আমাদের ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।’ ল্যাভেন্ডার, টাইম ও চন্দনকাঠ ইনফেকশন বা প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। আঙুলের ক্ষত সারাতে কোয়ার্ক প্যাকের মধ্যে সুগন্ধী তেলও সাহায্য করে।
নানা ক্ষেত্রে অ্যারোমা অয়েল প্রয়োগ করা যায়। সুগন্ধী তেল নাকের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কের আবেগ পরিচালন কেন্দ্রের উপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের রোগীদের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজে লাগে। বিয়াংকা ব্রাউনে বলেন, ‘কারণ, সুগন্ধ ও স্পর্শ পেলে স্মৃতিভ্রংশের রোগীরা আরো ভালোভাবে সাড়া দেন। তাঁদের গন্ধ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি জেগে উঠলে সে বিষয়ে কথা বলা যায়। এর মাধ্যমে তাঁদের শান্ত করা যায়, তাঁরা আরো আরাম করতে পারেন। নিরাপদ বোধ করেন। কারণ, সেটা তাঁদের চেনা অনুভূতি।’ ভালো অনুভূতি, ভালো স্মৃতি, অথবা শরীরের উপর ওষুধ হিসেবে সুগন্ধীর প্রভাব – যা-ই হোক না কেন, অ্যারোমা থেরাপি আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার সম্পূরক বা পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।