হৃদরোগ-স্ট্রোক এড়াতে পারেন যেভাবে

0

 আচ্ছা, ৪০ বছর বয়সের পর কি হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে?

 ‌প্রথমে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সম্পর্কে কিছু বলে নেয়া যাক। অনেক সময় হার্টের ধমনির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে। ফলে হৃদপিণ্ডের অন্দরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যার নামই হলো হার্ট অ্যাটাক। অন্যদিকে মস্তিষ্কে কোনো কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হলে ইস্কিমিক স্ট্রোক হয়। আর মস্তিষ্কের ধমনি ফেটে রক্তক্ষরণ হলে হেমারেজিক স্ট্রোক বলা হয়।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও ভাবা হতো, মোটামুটি ৫০ পেরনোর পরই স্ট্রোক-হার্ট অ্যাটাকের মতো অসুখগুলো হয়। বর্তমানে ৪০ বছর বয়সের পর বহু মানুষ স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে ৪০ বছর বয়স নয়, এখন অনেক কম বয়সেই এই ধরনের অসুখে মানুষ ভুগছেন। এমনকী ২০ বছর বয়সের গণ্ডি পেরলেই এই সমস্যা হতে দেখা যাচ্ছে। মোটকথা সমাজের সমস্ত স্তরকেই নিজের গ্রাসে নিয়ে ফেলেছে এই রোগগুলো। এমনকি মাত্র ৩০ বছর বয়সী আমার একজন পরিচিত চিকিৎসক হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলেন। প্রাণ বাঁচাতে তাঁর বাইপাস সার্জারি করতে হলো। এমন রোগীর কথা অহরহ শোনা যায়।

 এখন কেন এত কম বয়সে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে?
 মূলত জীবনযাপনের পদ্ধতিতে ভূলভ্রান্তিই কম বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়েছে। তৈলাক্ত খাদ্য, ভাজাভুজি খাওয়ার প্রতি মানুষের ঝোঁক ক্রমাগত বাড়ছে। মানুষ ঘুমোতে ভুলে গেছেন। শারীরিকভাবে ফিট থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। ব্যায়াম দূরে থাক, এক পা হাঁটতেও অনেকের কষ্ট হয়! রয়েছে মানসিক চাপ। বাড়ছে সিগারেট, মদ্যপানের অভ্যেস। সবমিলিয়ে এই অভ্যেসগুলি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর থেকে অনেক কম বয়সেই ব্যক্তি স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেশার, হাই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন। আর এই ধরনের শারীরিক সমস্যাগুলোই ডেকে আনছে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো অসুখ।

 এসব কিছু প্রতিরোধ কিভাবে?
 জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে বদল আনা হলে কম বয়সে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তেল, ঝাল, নুন, মশলা খাওয়া কমাতে হবে। বদলে মরশুমি শাকসব্জি, ফল খাওয়া বাড়ানো চাই। শারীরিকভাবে ফিট থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কিছু না পারেন অন্তত দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা দরকার। সিগারেট খাওয়া বা অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের নেশা এবং মদ্যপান ছাড়তে হবে। এসবের পাশাপাশি নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। যেমন— লিপিড প্রোফাইল, ফাস্টিং সুগার, ব্লাড প্রেশার ইত্যাদি।

পরিবারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে ২০ বছর বয়স হওয়ার পরই প্রতিবছর একবার এই টেস্ট করাতে হবে। পরিবারে এই রোগের ইতিহাস না থাকলে মোটামুটি ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর টেস্ট করালেই চলবে। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার, লিপিড প্রোফাইলের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে এই সমস্ত সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যস, এই পদ্ধতিতেই স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো গুরুতর অসুখগুলোকে রুখে দেয়া যায়।

পরামর্শে মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com