আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ংকর অবস্থায় রেখে গেছে: ড. দেবপ্রিয়

0

‘আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়ংকর অবস্থায় রেখে গেছে। তার উত্তরাধিকার সূত্রেই এ খারাপ অবস্থা পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। ওই অবৈধ সম্পদ অধিগ্রহণ করতে না পারলে কীসের বিপ্লব?’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘র্যাপিড’ আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো এবং শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সেমিনারের বিষয় ছিল ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ওপেন বাজেট জরিপ’র ফলাফল প্রকাশ। ইআরএফ মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। জরিপের ফল তুলে ধরেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আনোয়ারুল কবির ও ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বক্তব্য দেন।

দেবপ্রিয় প্রশ্ন রেখে বলেন, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্পদ কেন বাজেয়াপ্ত হলো না? এ সম্পদ কোথায় গেল? এ সম্পদ কেন আইনি প্রক্রিয়ায় সরকার অধিগ্রহণ করল না? লুণ্ঠনকারীদের যাদের ব্যাংক ঋণ আছে, সেগুলো সমন্বয়ের জন্য তাদের সম্পত্তি কেন দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিগ্রহন করা হলো না?

তিনি বলেন, ‘শুরুতে এমন পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এটি করা গেলে আমি নিশ্চিত মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ বাড়বে। আর্থিক খাতসহ নানা বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আছে। তবে কেন যেন উদ্বেগটা কাটছে না। সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, এর ফল আসছে না। মানুষ এত বেশি ধৈর্য রাখতে পারছে না কিংবা আস্থার সংকট হচ্ছে।’

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইআরএফ-এর এক অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। রোববার বলতে পারব কোন ডাল পচা, আর কোনটি ভালো ছিল। কারণ, ওইদিন প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা শ্বেতপত্র হস্তান্তর করব। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জনগণের জন্য গত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হবে। শ্বেতপত্র তৈরির জন্য তিন মাস সময় দিয়েছিল সরকার। কিন্তু আমরা আগেই করে ফেলেছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত। এ দুই খাতে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এটা তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে। সাধারণ মানুষের যে ধারণা আছে, এর চেয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল। এমন একটি অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো উত্তরাধিকার সরকারের করার কিছু থাকে না। তবে প্রশ্ন হলো- এর মধ্যেও যা করার ছিল, সেটি করতে পেরেছি কি না। ব্যাংকি খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তাৎক্ষণিক দূর করার চেষ্টা চলছে। সরকার পতনের পর যতটা উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে না পারলে দেশের মানুষকে ততটাই হতাশ করা হবে। এজন্য বছর শেষে সরকারকে ৫ মাসের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে হবে। আলোচ্য সময়ে সরকারের দিক থেকে কী কী কাজ করা হয়েছে, ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা জরুরি। আর বাজেটের আগে চলমান পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা প্রকাশ করা জরুরি। সেখানে ৫টি বিষয় তুলে ধরতে হবে। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক খাতের ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা।’

সিপিডির বিশেষ ফেলো বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের বেশকিছু উদ্বেগ আছে। এর মধ্যে বিগত সরকারের আমলে করা চুক্তি ও বিদেশি বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বর্তমান সরকার রক্ষা করছে কি না? দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলের বড় দুটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে। এসব বিষয় নিয়ে জানুয়ারিতে সরকারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি ‘ডেভেলপমেন্ট ফোরাম’ (উন্নয়ন ফোরাম) করতে হবে। এ ফোরামের সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘ফোরাম ফর ইনক্লুসিভ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন ফোরাম)’। এটি করতে পারলে আগামী বাজেটের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীরা সম্পৃক্ত হতে পারবে। দেবপ্রিয় বলেন, সরকার বেশকিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংস্কার বাস্তবায়নে মানুষের আর্থিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটি করতে না পারলে সংস্কার করা কঠিন হবে। কারণ, মানুষের অত ধৈর্য নেই।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেপরোয়া অনেক নীতি নিয়েছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এখন ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রপ্তানি বেড়েছে। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ আগামী ছয় মাস অত্যন্ত কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। কারণ, রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।

ড. আবু ইউসুফ বলেন, সরকারের ব্যয় স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কি না, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ খুবই কম জানতে পারছে। তিনি বলেন, বাজেট ব্যয়ে স্বচ্ছতা ৩৭ শতাংশ। এটি যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ আর বাস্তবায়ন তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।

আনোয়ারুল কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এটা কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, সে চেষ্টা করা হবে। জরিপে বেশকিছু সুপারিশ এসেছে, তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com