হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে গুমের মামলা

0

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৪ জনের নামে গুমের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০ জনকে।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুই দফায় গুম হওয়ার অভিযোগে সৈয়দ মাহমুদুল হাসান নামে একজন রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় এই মামলা করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়রুল ইসলাম।

মামলার আসামিরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গা (জাতীয় পার্টি), সাবেক এমপি মজিবুল হক চুন্নু (মহাসচিব) জাতীয় পার্টি, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোট নেতা দিলীপ বড়ুয়া, সাবেক সংসদ সদস্য তারানা হালিম, সাবেক শিল্পী সমিতির সেক্রেটারি নিপুণ আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ, মালিবাগের বাসিন্দা আলমগীর শিকদার, শাহজাহানপুরের রেজাউল কবির রেজা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ তাপসের ব্যবসায়িক অংশীদার ও সীতাকুন্ডুর সাবেক এমপি রিয়াদুল আলমের সহযোগী শওকত হোসেন পিন্টু, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, ইসহাক দুলাল, ঢাকা দক্ষিণের ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা কমল হোসেন, মতিঝিলের আবুল হাসান, যাত্রাবাড়ীর কমল চন্দ্র দাস ও তৌহিদুর রহমান মৃধাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০/৩০ জন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

এজহারে বাদী মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন অন্ধ সমর্থক ও কর্মী। ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ১৪ দলীয় নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা তার এক ভাষণে ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শহীদ নুর হোসেনকে একজন মাদকাসক্ত, ফেনসিডিল খোর, ইয়াবা সেবনকারী ইত্যাদি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় আমি ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর মসিউর রহমান রাঙ্গার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করি।

তিনি যেহেতু ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টের একজন প্রভাবশালী এমপি ছিলেন, সেহেতু এই বিষয় নিয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা প্রাপ্ত হয়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা আমার ওপর নানাভাবে অত্যাচার শুরু করা হয়। তখন আমার বাসা ছিল ২১৩/৪, নয়াটোলা, মগবাজার, ঢাকা।

২০১৯ সালে নভেম্বর মাসে ওই এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ১১ নম্বর আসামি হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে হঠাৎ আমার বাড়িতে হামলা করা হয়। সেই হামলার সময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা আমার বাসার আলমারির তালা ভেঙে আমার স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণের গহনা, নগদ পাঁচ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। আসামিরা আমার বাসার টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভেঙে-চুরে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে। আশেপাশের লোকজন আমাদের ডাক চিৎকারে কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্লেখিত আসামিদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমি মামলা দিতে গেলে আসামি হুমায়ুন কবিরসহ অপরাপর আসামিরা আমাকে জানে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে যাওয়ায় আমি প্রাণের ভয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ করতে পারিনি। এই সব আসামির নানাবিধ অত্যাচারে আমি বাধ্য হয়ে ওই এলাকা ছেড়ে বনশ্রী এলাকায় বসবাস শুরু করি।

মাহমুদুল হাসান আরও উল্লেখ করেন, আমি ফেসবুকে ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে লিখে পোস্ট করতাম। এতে সরকার ও তার সহযোগী লোকজনদের ক্রমেই আমার ওপর ক্ষিপ্ততা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি দলীয় কমিশনার প্রার্থী হই। তাতে আমার জীবনে নেমে আসে আরো ভয়াবহ অন্ধকার। বিপদ আঁচ করতে পেরে আমি আমার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনের তাগিদে গোপনে চলাফেরা করি।

২০২০ সালে ১০ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ৩ নম্বর গেটের সামনে পারিবারিক বিশেষ কাজ শেষ করে হাঁটতে হাঁটতে খিলগাঁও রেলগেটের দিকে যাওয়ার পথে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাদা রঙের একটি কালো গ্লাসের হায়েস মাইক্রো আমার সামনে এসে থামে। মাস্ক পরিহিত সিভিল পোশাকে তিনজন ব্যক্তি আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে কাপড়ে দুই চোখ বেধে ফেলে ও নির্যাতন শুরু করে। গাড়ির মধ্যে ওঠানোর পরেই গাড়ির ভেতরে হিন্দি গানের সাউন্ড অত্যাধিক জোরে বাজাতে শুরু করে।

এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা গাড়ি চলার পর অজ্ঞাত কোনো স্থানে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দুই হাত ধরে কিছুক্ষণ হাঁটিয়ে তারপর নিচের দিকে নামায়। সেখানে কোনো একটা ঘরের দরজা খুলে আমাকে একটা রুমে ঢুকিয়ে আমার দুই হাত একটা রডের মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে এবং দুই হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে চলে যাওয়ার সময় মাথার মধ্যে ঢুকানো ব্যাগটি খুলে দেয়। কিন্তু চোখের বাঁধন থেকেই যায়।

কয়েক ঘণ্টা পর এসে আমাকে হাতের হ্যান্ডকাপ খুলে বাইরে বের করার সময় আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ওই সময় আমার মুখের ওপর পানি ঢেলে দেয়। তারা একটা প্রশ্ন বেশি বেশি জিজ্ঞাসা করতো। সেটা হলো তোর ইন্ধনদাতা কে? তোকে টাকা দেয় কে? এভাবে ছোটো একটা কবরের মতো ঘরে অমানবিক নির্যাতনের মধ্যে এক মাসেরও বেশি আটকে রাখার অভিযোগ করেন হাসান মাহমুদ। মামলায় তিনি সেই সময়কার নানা নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন।

তার অভিযোগ, এজহারের ১-১০ নং আসামির নির্দেশে ১১-২৪ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে আমাকে অপহরণ করে গুম করে রেখে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যেমে আমার স্বাভাবিক জীবনকে পঙ্গু করে ফেলেছে। আসামিদের নির্যাতনের কারণে অপহৃত থাকাকালে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হয় এবং আমার চোখের দৃষ্টি শক্তির মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়। সেই সময় পুলিশ, র্যাবসহ আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে মামলা করা তো দূরের কথা আমার ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা বলতেও ভয় পেতাম।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com