ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লার শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শোকর নিহত
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লার শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শোকর নিহত হওয়ার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তার সত্যতা স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। বুধবার রাতে হিজবুল্লার জনসংযোগ দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কমান্ডার শোকরের নিহতের সংবাদ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার কমান্ডার শোকরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ উপস্থিত থাকবেন।
শনিবার রাতে ইসরায়েলের গোলান হাইটস অঞ্চলের একটি গ্রামে হিজবুল্লাহর রকেট হামলায় ১২ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরী নিহত হয়। গ্রামটি দ্রুজ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত।
এ ঘটনার জন্য হিজবুল্লাহকে সরাসরি অভিযুক্ত করে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হিজবুল্লাহ।
তারপর মঙ্গলবার রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুত ও তার আশপাশের অঞ্চলে বিমান হামলা চালায় আইডিএফ। এ সময় বৈরুতের শহরতলী এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থানকালে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় নিহত হন কমান্ডার শোকর। তার নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরানে হামলার শিকার হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ে।
১৯৮২ সালে লেবাননে ইসলায়েলি বাহিনী অভিযান চালানোর পর দেশটির শিয়াপন্থি মুসলিমদের একাংশ প্রতিষ্ঠা করেন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই গোষ্ঠীটি ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি শাসকদের অনুসারী। সেসময় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন ইমাদ মুঘনিয়েহ। ২০০৮ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি।
ফুয়াদ শোকর হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ইসরায়েলের অভিযানের সময় লেবাননের যেসব যোদ্ধা প্রতিরোধ করে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে শোকর ছিলেন অগ্রসারিতে। এ সময় তার উল্লেখযোগ্য দুই সহযোদ্ধা ছিলেন ইমাদ মুঘনিয়ে এবং মুস্তফা বদরুদ্দিন। মোস্তফা ২০১৬ সালে সিরিয়ায় নিহত হন।
১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন মেরিন সেনাঘাঁটিতে যে বোমাহামলা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন শোকর। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৪১ জন মার্কিন সেনা।
ফুয়াদ শোকরের আরেক নাম আলহাজ মোহসিন। ২০০৮ সালে ইমাদ মুঘনিয়েহর মৃত্যুর পর গোষ্ঠীর ভেতর গুরুত্ব বাড়তে থাকে শোকরের। সামরিক শাখার প্রধান কমান্ডারের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর পরিকল্পনা ও যুদ্ধকালীন অপারেশন বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি।
‘মিলিটারি মাস্টারমাইন্ড’ নামে পরিচিত এই হিজবুল্লাহ কমান্ডার যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত। ২০১৭ সালে তার মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার ঘোষণা করে ওয়াশিংটন।
ফুয়াদ শোকর নিহত হওয়ার পর লেবাননের হিজবুল্লাহপন্থি এমপি আলী আম্মার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় শোক প্রকাশ করে বলেন, “শত্রুপক্ষ (ইসরায়েল) যুদ্ধ চাইছে এবং আমরা এজন্য প্রস্তুত। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমরা প্রস্তুত।”
সূত্র : রয়টার্স