যেসব আমলকারীর জন্য দোয়া করেছেন নবিজি (সা.) তারা কারা?

0

প্রত্যেক নবি ও রাসুলগণ নিজ নিজ বংশধরদের জন্য দোয়া করেছেন। নিজ জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা নগরীর জন্য দোয়া করেছেন। সেসব দোয়া কোরআনুল কারিমে ওঠে এসেছে। যে দোয়ার সুফল পেয়েছে নবি-রাসুলদের পরবর্তী প্রজন্ম। ঠিক আমাদের নবিজি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এমন কিছু আমলের কথা বলেছেন, যা পালন করলে পাওয়া যাবে তাঁর দোয়া ও অনুগ্রহ। সে আমলগুলো কী আর যাদের জন্য দোয়া করা হবে, তারা কারা?

১. আসরের নফল নামাজ পড়া

আসরের ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়া। এ নামাজ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া পাওয়ার আমল। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত নাজিল করেন, যে আসরের (ফরজ) নামাজের আগে চার রাকাত (নফল) নামাজ আদায় করে।’ (আবু দাউদ ১২৭১; তিরমিজি ৪৩০)

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসরের (ফরজ নামাজের) আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তিনি (আল্লাহর) নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতা ও তাদের অনুগামী মুসলিম এবং মুমিনদের প্রতি সালাম করার মাধ্যমে এ নামাজের মাঝখানে বিভক্তি করতেন (দুই সালামে চার রাকাত আদায় করতেন।’ (তিরমিজি ৪২৯)

২. জামাতের প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ানো

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, যারা জামাতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।’ (ইবনু মাজাহ ৯৯৬)

৩. মুয়াজ্জিন ও ইমাম হওয়া

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন আর ইমামদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জামিন্দার এবং মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সৎ পথে পরিচালিত করো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৭; তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)

৪. স্বামী-স্ত্রীর তাহাজ্জুদ পড়া

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর  একে অপরকে সহযোগিতা করা। কোনো দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে ওই স্বামী-স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করুন, যে রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করে; এরপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য)। আর আল্লাহ ওই নারীর ওপরও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ ১৩০৮, ইবনু মাজাহ ১৩৩৬)

৫. লেনদেনে সহনশীল হওয়া

পাওনাদারের ঋণ আদায় করা এবং ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হওয়া। মানুষের জীবনের চলার পথে লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, তাদের জন্য রয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত দান করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনু মাজাহ ২২০৩)

৬. কোমল হৃদয় হওয়া

অধীনস্থ ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমেও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া অর্জন করা যায়। হাদিসে পাকে এসেছে-

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য এভাবে দোয়া করেন-

اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ

‘হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও। ’ (মুসলিম ১৮২৮)

৭. সকালে বরকতময় কাজ করা

সকালের সব ভালো কাজেই বরকত নাজিল হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে বরকত নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের সকালের মধ্যে তাদের বরকত দান করুন। ’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোথাও কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকালেই পাঠাতেন।’ (তিরমিজি ১২১২)

৮. হাদিস মুখস্থ ও প্রচার করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস মুখস্থ ও মানুষের মাঝে প্রচার করলে তাঁর দোয়া পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়। হাদিসে এসেছে-

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মর্যাদামণ্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। (তিরমিজি ২৬৫৮)

এসব গুলোই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে রহমত ও দোয়া পাওয়ার অন্যতম উপায়। তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, নিয়মিত আমলগুলো পালন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমলগুলো বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। নবিজির দোয়া ও রহমত পেয়ে ধন্য হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com