বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে সান্ধ্য আইন জারি করেও জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি সরকার: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে সরকার মূলত সান্ধ্য আইন জারি করেছে। সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারের নির্দেশে আন্তজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু জনতার ঢলে পরিপূর্ণ এখন খুলনা শহর। তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতেই সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকার গণসমাবেশ ঠেকাতে যা করেছে তা নজিরবিহীন।
শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকারের নির্দেশে সমাবেশের দুইদিন আগে সড়ক পরিবহন ও লঞ্চ ধর্মঘট শুরু করা হয়। সরকারের নির্দেশে এই ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ, রোগী ও পরীক্ষার্থীরা। শুক্রবার থেকে ফেরী ও নৌ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। সমাবেশে যাতে লোক সমাগম না হয়, তার সকল চেষ্টাই করে যাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে চেকপোস্টসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। খুলনার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে গণসমাবেশে মানুষের ঢল যাতে না নামে। সরকারের এহেন অপকৌশলে জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়লেও তারা অদম্য উৎসাহ নিয়ে সমাবেশ স্থলে দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় খুলনায় যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন সেই বাড়ির লোকজনসহ সেখান থেকে প্রায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু স্থানীয় নেতাকর্মীরাই নয়, ঢাকা থেকেও যেসব বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুলনা গেছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মাগুরা স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মাইক্রোবাস সমাবেশ স্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ আটক করে তাদের গ্রেফতার করে গতকাল তাদেরকে আদালতে পাঠিয়েছে।
রিজভী বলেন, সাতক্ষীরা থেকে বাসযোগে সমাবেশে আসার পথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাগেরহাট থেকে আসার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি ট্রলার আটকে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঝিকরগাছা থেকে আসার পথে ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ তাদেরকে আটক করেছে। কেশবপুর থেকে সমাবেশ স্থলে আসার পথে সোনাডাঙ্গায় ‘এই গাড়ি থামা’ বলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক, রড ও ছুরি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভয়ানক জখম করেছে। সন্ত্রাসীরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। সমাবেশ স্থলের আশপাশসহ খুলনার প্রবেশ পথে নেতাকর্মীদের ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সকল বাধা উপেক্ষা করে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশকে সফল করতে নেতাকর্মীরা প্রবল আনন্দ-উদ্দীপনায় খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্ত্বরে ইতোমধ্যে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিভাগের জেলাগুলো থেকে চিড়া-মুড়ি-গুড়-পানি-বিছানা নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হয়েছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র স্বীকৃত ভিন্নমতকে সহ্য করেনি। সমাবেশ করা গণতন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান শর্ত। এটিকে বাধাগ্রস্ত করার একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে কর্তৃত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত রাখা।