মানুষের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামি বিচার ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

0

আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ন্যায়পরায়নতা, সদাচারের নির্দেশ দেন। মানুষের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামি বিচার ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কোরআন-সুন্নায় এ সম্পর্কে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ইসলামে সুবিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

১. وَ اِذَا حَکَمۡتُمۡ بَیۡنَ النَّاسِ اَنۡ تَحۡکُمُوۡا بِالۡعَدۡلِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمۡ بِهٖ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا

আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতাসর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)

২. اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯০)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিনটি বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন। তাহলো- সুবিচার, অনুগ্রহ ও আত্মীয়দের প্রতি অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে তিন প্রকার কাজ করতে নিষেধ করেছেন। অশ্লীলতা, যাবতীয় মন্দ কাজ এবং জুলুম ও উৎপীড়ন। এ আয়াত সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এটি হচ্ছে কুরআনুল কারীমের ব্যাপকতর অর্থবোধক একটি আয়াত।’ (ইবনে কাসির)

ইমাম রাগিব ইসপাহানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আদল অর্থ বিচারের ক্ষেত্রে কোনোরূপ পক্ষপাতিত্ব না করে সমান সমান করা। অর্থাৎ ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ এই নীতিতে বিচারকার্য সম্পাদন করা। শায়খ আবুল বাকা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহহি)-এর মতে, আদল শব্দটি জুলুমের বিপরীত। এর অর্থ হলো- যার যা প্রাপ্য যথাযথভাবে তাকে তা দেওয়া।’ (প্রগুক্ত) কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ আরও ঘোষণা করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُوۡنُوۡا قَوّٰمِیۡنَ بِالۡقِسۡطِ شُهَدَآءَ لِلّٰهِ وَ لَوۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِکُمۡ اَوِ الۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ ۚ اِنۡ یَّکُنۡ غَنِیًّا اَوۡ فَقِیۡرًا فَاللّٰهُ اَوۡلٰی بِهِمَا ۟ فَلَا تَتَّبِعُوا الۡهَوٰۤی اَنۡ تَعۡدِلُوۡا ۚ وَ اِنۡ تَلۡوٗۤا اَوۡ تُعۡرِضُوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا

হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা বাবা-মার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়। যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র, তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে- পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা এড়িয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমরা যা কর সে বিষয়ে সম্যক অবগত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫)

ন্যায়বিচারের প্রতিদান এবং অন্যায় বিচারের মন্দ পরিণাম সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দেন-

‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতি হবে। আর দ্বিতীয় প্রকার বিচারক জাহান্নামি হবে। জান্নাতি বিচারক হচ্ছে ওই ব্যক্তি; যে হক (সত্য) জেনে সে মোতাবেক ফয়সালা করেছে। আর যে ব্যক্তি হক জানা সত্ত্বেও আদেশ দানের ক্ষেত্রে অন্যায়ের আশ্রয় করে, সে হবে জাহান্নামি। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞ অবস্থায় বিচারকার্য সম্পাদন করে সেও জাহান্নামি হবে।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘ইসলামি আইনের দৃষ্টি ছোট-বড়, ধনী-গরিব, শাসক-শাসিত, আপন-পরের মধ্যে কোনো পার্থক্য ও তারতম্য নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ঘোষণা করেন-

‘হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের আগের লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ জন্য যে, তারা কোনো সম্মানিত লোক চুরি করলে তখন তারা তাকে রেহাই দিতো। আর যখন কোনো দুর্বল ব্যক্তি চুরি করতো তখন তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা ফাতেমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত কেটে দেবেন।’ (বুখারি)

মনে রাখতে হবে

ইসলামে বিচার ব্যবস্থা অনন্য। সুশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। কেউ এর থেকে উর্ধ্বে নয়। ইসলামের শোনালী যুগে এর প্রমাণ রয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ ছেলে আবু শাহ্‌মাকে মদ্য পানের অপরাধে অপরাধী হলে তাকে দণ্ড প্রদান করেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com