উত্তরা-টঙ্গীতে কিশোর গ্যাংয়ের দাপট

0

রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার পর ফের আলোচনায় কিশোর গ্যাং। রাজধানীর কিশোর গ্যাংয়ের হটস্পট নামে পরিচিত উত্তরা ও পার্শ্ববর্তী টঙ্গী এলাকা। এ দুটি স্থানে বেশ ভয়ংকর হয়ে উঠছে এ গ্যাংয়ের সদস্যরা। গত ৬ বছরে উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং তুরাগ এলাকায় অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা, ছোট অপরাধ থেকে শুরু করে গ্যাং সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে বড় অপরাধে। কেউ কেউ ছিনতাইকারী থেকে ভয়ংকর খুনি হয়ে উঠছে।

এদের কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির নেতা ফায়দা হাসিল করছেন। এ কারণে বন্ধ হচ্ছে না গ্যাং কালচার। এতদিন নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িত ছিল গ্যাং সদস্যরা। তারা এখন এতটাই বেপরোয়া যে, নিজ শিক্ষককেও খুন করতে দ্বিধাবোধ করছে না। কিশোর গ্যাং নির্মূলে অধিকতর আন্তরিকতা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি কিশোর গ্যাংয়ের তিন শতাধিক সদস্য অপরাধে লিপ্ত। এলাকার কথিত বড় ভাইয়েরা গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের হাতেই প্রতিটি গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ। কিশোর বয়সে তাদেরও (বড়ভাই) অপরাধের হাতেখড়ি হয়েছে। তাদের নামে উত্তরার বিভিন্ন থানায় খুন থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। এ মুহূর্তে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৭ এবং ১৮ নম্বর রোডে কিশোর গ্যাং সদস্যদের দাপট বেশি। তারা এই দুই রোডের বিভিন্ন দোকানে বসে আড্ডা দেয়। ইভটিজিং করে। তাদের নানা কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসীন গাজী বলেন, ১০ নম্বর সেক্টরটি তুরাগ এলাকার পার্শ্ববর্তী। সেখানে কোনো বাউন্ডারি বা দেওয়াল নেই। এ কারণে তুরাগ এলাকা থেকে বখাটেরা ১০ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন রোডে এসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করে। তাদের তৎপরতা রোধে পুলিশি টহল অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, বখাটেরা সন্ধ্যার পরই বেশি আড্ডা দেয়। নিয়মিত টহল ছাড়াও কোনো এলাকাবাসী অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গেই ওইসব স্থানে টহল টিম পাঠানো হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, উত্তরা এলাকার ভয়ংকর কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে রয়েছে-বিগ বস, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, নাইন স্টার, নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্ল্যাক রোজ, রনো, কে নাইন, ফিফটিন গ্যাং, পোঁটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রি গোল গ্যাং, শাহীন রিপন গ্যাং, নাজিম উদ্দিন গ্যাং, তালা চাবি গ্যাং প্রভৃতি। গত ৬ বছরে উত্তরা এলাকাতেই ১০টি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসবের মধ্যে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির হত্যার ঘটনাটি ছিল খুবই চাঞ্চল্যকর। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরার গ্যাং কালচারের ভয়াবহ চিত্র সামনে আসে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টঙ্গী এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী এমনকি হত্যা মামলার আসামিরা এখন কিশোর গ্যাং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের মধ্যে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন মোল্লার বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাইসহ তিনটি মামলা রয়েছে। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাজমুলের বিরুদ্ধেও চারটি মামলা রয়েছে। ছয়টি মাদকের মামলার আসামি ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের রহিম। ওই এলাকার দুটি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি পারভেজ। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন, ইউসুফ, কাইল্যা সাগর, রনি, জুয়েল ও জীবনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাদের সবার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এদের নেপথ্যে অছে সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি।

জানতে চাইলে উত্তরার বাসিন্দা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান ড. কুদরাত ই খুদা বাবু বলেন, এ প্রজন্মকে আমরা কী শিক্ষা দিচ্ছি। কিশোর গ্যাং নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা আমাদের অনেক ব্যথিত করছে। এ ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা অনেক আগেই করেছি। এ তালিকা মাঝেমধ্যেই হালনাগাদ করা হচ্ছে। প্রায়ই আমরা কিশোর গ্যাং বিরোধী অভিযান চালাই। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। মাঝেমধ্যেই তাদের ধরে থানায় আনি। কাউকে কাউকে আদালতে সোপর্দ করি। আবার কাউকে কাউকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু পুলিশের একার পক্ষে কিশোর গ্যাং নির্মূল করা সম্ভব নয়। পরিবারসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নূর-ই সিদ্দিকি তারেক বলেন, কিশোর গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবেস্থানে আছি। সার্বক্ষণিক টহলের পাশপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com