টার্গেট কুরবানির বাজার: ভারত থেকে চোরাই পথে আসছে অসংখ্য গরু
আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম বেড়েছে। বিশেষ করে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোর চক্র। এই দুই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় সীমান্ত পথে দিন-রাতে ভারত থেকে স্রোতের মতো আসছে গরুসহ চোরাইপণ্য। হরহামেশাই ঢুকছে মাদক, গোলাবারুদের চালান। এই চোরাচালানের সাথে জড়িত রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। তারা বিজিবি, ডিবি ও থানা পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে নিরাপদে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে চোরাই গরুসহ মালামাল আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূল হোতারা। এসব তথ্য জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের বিছনাকান্দি সীমান্ত থেকে একটি চোরাই গরুর চালান আটক করে বিজিবি। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি ৪৮ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, আটককৃত ২৪টি ভারতীয় গরুর বাজার মূল্য প্রায় ২৭ লাখ টাকা।
জানা যায়, ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির জন্য গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি দিয়ে প্রতিদিন দেশে আসছে অসংখ্য গরু। সীমান্ত পেরোনোর পর কিছুটা নৌপথ ও কিছুটা সড়কপথ ভ্রমণ শেষে শহরে প্রবেশ করেছে গরুগুলো। কেবল বিছনাকান্দি দিয়েই প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শ’ গরু অবৈধভাবে দেশে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সীমান্তের ওপারের ভারতীয় টিলা থেকে দলবেঁধে নেমে আসছে গরু। টিলা থেকে নেমে ঝর্ণার জলে সাঁতরে গরু প্রবেশ করছে বাংলাদেশের পানিতে। ওপারের টিলার ওপর থেকে কয়েকজন এদিকে ছেড়ে দেয় গরুগুলো। এপারে আসার পর আরো কয়েকজন গুণে গুণে গরুগুলো ইঞ্জিন নৌকায় তুলে নেয়। এরপর গরু নিয়ে আসা হচ্ছে সিলেটের দিকে। আশপাশেই বিজিবিই সদস্যরা টহল দিলেও এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের।
কাস্টমস ও ভ্যাট কমিশনারেট-সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারত বৈধভাবে বাংলাদেশে গরু রফতানি করে না। তবু প্রতিবছর ঈদুল আযহার মৌসুমে সিলেটের সীমান্তগুলো দিয়ে ভারত থেকে আসে অসংখ্য গরু। এই চোরাচালানে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) স্থানীয় দায়িত্বশীলরা জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠেছে।
যেভাবে এপারে আসে:-পাচারকারীরা সীমান্ত বাহিনী বিজিবি ও পুলিশের নজর সরাসরি এড়াতে ছোট-ছোট গাড়ি ব্যবহার করে। রাতের বেলা এ চক্রটি মেঘালয় রাজ্যের জোয়াই-বদরপুরের জাতীয় সড়কের পাশের বিভিন্ন বাড়িতে গরু-মহিষসহ মালামাল পৌঁছে দেয়। সেখানে হাত বদলের দায়িত্বে থাকে স্থানীয় কিছু খাসিয়া যুবক। পরে অন্য একটি পাচারচক্র সেখান থেকে সময়-সুযোগ মতো নিয়ে যায় সীমান্তে। এজন্য গরু প্রতি ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, পাচারকারী দল গরু-মহিষ ও চোরাই মালামাল আনা নেয়ার জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ব্যবহার করে। টাকার বিনিময় এসব বাড়িতে গরু-মহিষসহ বিভিন্ন পণ্য রেখে নম্বর ফেলা হয়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে সমতলের চোরাকারবারীদের জানিয়ে দেয়া হয় গরু ও মহিষের নম্বর। ওপার থেকে প্রথমে দুয়েকটি গরু ছেড়ে দিলেই সীমান্তের এপারে থাকা লাইনম্যানের কাছে চলে আসে সঙ্কেত। এছাড়া বিএসএফে’র টহল ও নজরদারি একটু ঢিলেঢালা হলেই গরু-মহিষের গলায় ও মুখে রশি বেঁধে জোড়া-জোড়া করে ছেড়ে দেয়া হয়। এপারে পৌঁছামাত্র দাঁড়িয়ে থাকা লাইনম্যানরা নম্বর দেখে দ্রুত সরিয়ে নেয় সেগুলো। এভাবে চলছে মেঘালয় ও জৈন্তাপুর সীমান্ত পথে ভারতীয় অবৈধ গরু-মহিষ ও পণ্য চোরাকারবারীদের রমরমা ব্যবসা।