রোগ-ব্যাধি-মহামারিমুক্ত থাকতে নবিজীর আমল
দীর্ঘদিন ধরেই করোনাভাইরাসে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। কখনো কোথাও এর প্রকোপ কমছে আবার কোথাও বাড়ছে। এখনও বিশ্ব এ ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। করোনা ছাড়াও মৌসুমি মারাত্মক রোগ-ব্যাধির আক্রমণও আছে ব্যাপকহারে। এসব রোগ-ব্যাধি ও মহামারিমুক্ত থাকতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ মেনে চলা ও দেখানো আমল করা জরুরি।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনা জাতির মধ্যে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন নতুন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে, যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)
যে কোনো সংক্রামক রোগ-ব্যাধি ও মহামারি থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত এ আমলগুলো করা-
১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি তোমরা মহামারীর (নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির) কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে (আক্রান্ত অঞ্চলে) তোমরা প্রবেশ থেকে বিরত থাক। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ে (অন্য কোনো অঞ্চলে) যেয়ো না।’ (বুখারি)
২. গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার পড়া-
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْم
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।
৩. যে কোনো অজানা রোগ-ব্যাধি ও মহামারি থেকে বাঁচতে নবিজীর শেখানো এই দোয়া পড়া-
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।
৪. যে কোনো ভয়াবহ বিপদ-আপদ থেকে বাঁচতে হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের এ দোয়াটি পড়া-
لَااِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْن
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
৫. ছোট-বড় সব বিপদ ও মুসিবতে এ দোয়া পড়া-
اِنَّالِلَّهِ وَ اِنَّا اِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ – اَللّهُمَّ اَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا
উচ্চারণ : ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন; আল্লাহুম্মা আযিরনি ফি মুসিবাতি ওয়াখলুফলি খাইরাম মিনহা। (মুসলিম)
৬. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসিসহ সকাল-সন্ধ্যা এ সুরাগুলো পড়া-
সুরা ইখলাস।
সুরা ফালাক ও
সুরা নাস পড়া।
৭. নবিজীর বিশেষ আমল
হজরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’
৮. নতুন সৃষ্ট সংক্রামক ব্যাধি ও অশ্লীলতা থেকে মুক্তির জন্য এ দোয়া পড়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
৯. সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার এ দোয়া পড়া-
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন সার্রি মা খালাকা।
ভাইরাসজনিত রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে যেসব সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, তাহলো-
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা চেষ্টা অব্যাহত রাখা। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো। যতটা সম্ভব ঘরেই থাকার চেষ্টা করা।
২. একান্ত প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা।
৩. প্রয়োজন ছাড়া গণপরিবহন তথা বাস-ট্রেন-লঞ্চের যাতায়াত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।
৪. ঘরে ফেরার পর হ্যান্ডওয়াশ বা তরল সাবান কিংবা জীবানুনাশক দিয়ে ভালোভাবে ন্যূনতম ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে নেওয়া।
৫. বাইরে যাওয়ার আগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে যাওয়া।
৬. সকালে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের জন্য ঘরের দরজা-জানালা কিছু সময় খুলে রাখা।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সুস্থ ও শক্তিশালী থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। ফলমূল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি গ্রহণ করা। রান্না বা প্রক্রিয়ার আগে তা ভালোভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেয়া কিংবা ধুয়ে নেওয়া।
৮. আমিষ জাতীয় খাবার- ডিম, গোশত কিংবা মাছ রান্নার সময় তা ভালোভাবে সেদ্ধ করে নেওয়া।
৯. করোনা বা করোনা জাতীয় সংক্রামক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেলে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা এবং অন্যদের সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সব মানুষকে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা করুন। সতর্কতামূলক বিষয়গুলো মেনে চলার চেষ্টার পাশাপাশি উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।