ভালো আচরণ ও ব্যবহারের ফজিলত
হজরত আবু ওমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী ঘরের যিম্মাদার, যে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্বেও ঝগড়া পরিহার করে। আর যে ব্যক্তি হাসি-তামাসার মধ্যেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের উঁচুস্থানে একটি ঘরের যিম্মাদার হব। আর যে ব্যক্তি (অন্যের সঙ্গে) ভালো ব্যবহার করে, তার জন্য আমি জান্নাতের উচ্চতম স্থানে একটি ঘরের যিম্মাদার।’ (আবু দাউদ)
ভালো আচরণ ও ভালো ব্যবহার করা সুন্নাত। হাদিসের এ দিকনির্দেশনা ছাড়াও কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ পরস্পরকে ভাই ভাই হয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলাম সব মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সদ্ব্যবহারের শিক্ষা দেয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ মর্মে আয়াত নাজিল হয় যে-
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ
‘নিশ্চয়ই সব মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর এবং আল্লাহকে ভয় কর; যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)
এ আয়াত দুনিয়ার সব মুসলিমকে বিশ্বজনীন এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার ঘোষণা। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও সুসম্পর্ক দেখা যায় না। যা শুধু মুসলিম উম্মাহর মাঝে পাওয়া যায়। কোরআনের এ নির্দেশের দাবি, গুরুত্ব ও ফজিলত একাধিক হাদিসে ওঠে এসেছে-
১. হজরত জারির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে ’বায়আত’ নিয়েছেন-
এক. নামাজ প্রতিষ্ঠা করবো।
দুই. জাকাত আদায় করতে থাকবো।
তিন. প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো।’ (বুখারি)
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে লড়াই করা কুফরি।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৩. অন এক হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও সম্মান (নষ্ট বা ক্ষতি করা) হারাম।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
৪. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা ছেড়ে দেয় না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৫. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ঈমানদারদের সঙ্গে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন হবে; দেহের সঙ্গে মাথার সম্পর্ক যেমন হবে। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
৬. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম)
৭. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মত একে অপরের থেকে শক্তি পেয়ে থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম)
৮. নবিজী অন্য হাদিসে বলেছেন, ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না।’ (বুখারি, মুসলিম)
৯. হাদিসে পাকে এসেছে, বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন।’ (মুসলিম)
১০. হাদিসে পাকে আরও এসেছে, ‘কোনো মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে তখন ফেরেশতা বলে– ’আমিন (কবুল কর) আর তোমার জন্যও তদ্রূপ হোক।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ ও ভালো ব্যবহার করা। হাদিসের ঘোষিত ফজিলতগুলো পেয়ে ধন্য হওয়া
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। সব মুসলমান পরস্পরের সঙ্গে ভালো আচরণ ও ভালো ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।