নবিজীর জন্য আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার নিদর্শন
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবিজীর জামাতা। যুবকদের মধ্যে সর্ব প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীও তিনি। হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার পরেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। নবিজীকে তিনি খুব বেশি ভালোবাসতেন। ইসলাম গ্রহণই তাঁর প্রমাণ। বিভিন্ন কঠিন মুহূর্তেও তিনি এ ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। জবিনের ঝুঁকিসহ কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি সঙ্গে ছিলেন। কেমন ছিল নবিজীর প্রতি তাঁর ভালোবাসা?
নবিজীকে খুব কাছ থেকে দেখা
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছোটবেলা থেকেই নবিজীকে খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। দেখেছেন তাঁর অনুপম আদর্শ। নবুয়তের আগেই তিনি নবিজীর জীবনাচার-চলাফেরায় মুগ্ধ ছিলেন। কারণ একই ঘরে তারা বসবাস করেছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুকাল থেকে যুবক বয়স পর্যন্ত হজরত আলির বাবা আবু তালেবের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। এ ছাড়া হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা ফাতিমা বিনতে আসাদও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লালন-পালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
ইসলাম গ্রহণ
মক্কায় যখন কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করার সাহস করতো না, তখন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু জীবনের মায়া ত্যাগ করে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় নিজেকে উৎসর্গ করে দেন। ইসলামের দাওয়াতে তিনি নবিজীকে সময় দেন।
দাওয়াতের সঙ্গী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার বনু হাশেম গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, সে সময় হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বিশ্বনবির সঙ্গে থাকার দুঃসাহসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন কিশোর।
আত্মত্যাগের ঝুঁকি গ্রহণ
এমনকি মক্কায় চরম বিপদের সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের রাতে তাঁর নিজের বিছানায় নির্ভয়চিত্ত হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শুইয়ে রেখে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। যাতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মানুষের গচ্ছিত রাখা আমানত (সম্পদগুলো) যথাযথ সততার সঙ্গে প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিতে পারেন।
অথচ সে রাতটি ছিল নবিজীকে তার বিছানায় রেখেই হত্যার মাধ্যমে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে চরম আত্মত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েই নবিজীর বিছানায় শুয়ে ছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ ছিল নবিজীর প্রতি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত।
নবিজীর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় সংঘটিত ইসলামের প্রত্যেকটি যুদ্ধেই অংশ গ্রহণ করে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বীরত্ব ও সাহসিকতার এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যা আজও ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয়।
হজরত ফাতেমার সঙ্গে বিবাহ
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ভালোবাসার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কলিজার টুকরা হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাঁর কাছে বিয়ে দেন। অথচ হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার জন্য সে সময় অনেক বড় বড় পরিবার থেকে প্রস্তাব ছিল। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষ থেকে প্রস্তাবে বিনা বাক্যেই তিনি রাজি হয়ে যান।
জ্ঞানের শহরের রাজত্ব
নবিজী ছিলেন জ্ঞানের শহর আর হজরত আলি ছিলেন সেই শহরের দরজা। জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় অপ্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে বিশ্বনবির বক্তব্য ছিল এমন যে, আমি জ্ঞানে শহর আর সে শহরের দরজা হলো আলি। তাইতো হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় বাইয়াতে রিদওয়ানের চুক্তিপত্র লেখেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু।
হজরত আলির কোরআন তেলাওয়াত
নবম হিজরিতে হজরত আবু বকরের নেতৃত্বে হজ পালনের সময় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তিনি (হরজত আলি) সুরা তাওবার ১ থেকে ৩৭ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করে হজে আগত লোকদের শোনান। এ আয়াতগুলোতে ছিল মুক্তির ঘোষণা এবং কাফের মুশরিকদের হজ্ব সম্পাদনে অনুমতি দানের অস্বীকৃতি।
নবিজীর কলিজার টুকরা জামাতা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের অন্যতম একজন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।
নবিজীর প্রতি তাঁর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণা। আল্লাহ তাআলা মুসলমান জাতিকে তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণে ঈমানের স্পৃহা বৃদ্ধি বাড়িয়ে দিন। তাদের মতো বাস্তবজীবনে ইসলামকে একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।