কথা বলায় যে আমল করতে বলেছেন নবিজী (সা.)
ভাব বিনিময়ের প্রধান অনুসঙ্গ হচ্ছে কথা বলা। দুনিয়ায় মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে একে অপরের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। মানুষের এ কথা বলার ধরণ কেমন হবে? কথা বলা প্রসঙ্গে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা ও প্রাপ্তিই বা কী?
উত্তম ভাষায় কথা বলার নির্দেশ এসেছে কোরআন-সুন্নাহয়। যারা উত্তম ভাষায় কথা বলবেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সর্বোত্তম পুরস্কার। এমনকি যারা উত্তম ভাষায় কথা বলতে অপরাগ; তাদেরকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْناً
’তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাষায় (নরম নরম) কথা বল।‘
হাড়বিহীন জিহ্বা যেমন নরম, ঠিক নরম জিহ্বা দিয়ে মানুষ নরম ও সুন্দর কথা বলবেন এটাই স্বাভাবিক। অথচ এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আল্লাহর দেওয়া নরম জিহ্বা দ্বারা শক্ত এবং কটু কথা বলে থাকেন। যা মানুষের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।
সুন্দর ও উত্তম কথার বিনময়ে রয়েছে অফুরন্ত রহমত। কেউ কাউকে গালি দিলে বা মন্দ কথা বললে তার জবাব সুন্দর ও উত্তম ভাষায়ই দিতে হবে। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাও এমন। শান্তিময়, কল্যাণকর ও ঝগড়াবিহীন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উত্তম ও সুন্দর ভাষায় কথা বলার বিকল্প নেই। হাদিসে পাকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালো ভাষায় কথা বলার চমৎকার নসিহত এভাবে তুলে ধরেছেন-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে (এমন) একটি বালাখানা রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। (এ কথা শুনে) এক বেদুঈন বললো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বালাখানা কাদের জন্য?
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
১. যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে ভালো (উত্তম ভাষায়) কথা বলে;
২. যে ব্যক্তি ক্ষুধার্থকে খাবার দেয়;
৩. যে ব্যক্তি রোজা রাখে; এবং
৪. যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে; যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। অর্থাৎ গভীর রাতে যারা নামাজ আদায় করে। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
হাদিসের শিক্ষা
যারা জান্নাতের নেয়ামতে পরিপূর্ণ বালাখানা পাবেন; তাদের অন্যতম গুণ হলো- তারা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাষায় কথা বলবেন। সুতরাং মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও উত্তম ভাষায় কথা বলার বিকল্প নেই।
মুমিন মুসলমানের উচিত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, তথা রাষ্ট্রীয় জীবনের সবক্ষেত্রে পরস্পরের সঙ্গে উত্তম কথা বলা। অন্যকে উত্তম কথা বলতে উৎসাহ দেওয়া। তবেই কোরআন-সুন্নাহর সঠিক বাস্তবায়ন হবে। আর জান্নাতে উত্তম বালাখানা পাবে মুমিন মুসলমান।
নবিজীর এ কথার উপরও আমল করতে বলেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমজি, মুসনাদে আহমদ, ইবনু মাজাহ)।
এ হাদিসের অন্যতম শিক্ষা হলো, অন্যের সঙ্গে উত্তম ভাষায় কথা বল। যদি কথা বললে প্রতিবন্ধকতা বা বাধার সৃষ্টি হয় কিংবা কোনো খারাপ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে ধৈর্যের সঙ্গে চুপ থাকা।
মুসলিম উম্মাহকে উত্তম ভাষায় কথা বলার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছোট্ট একটি আমল উল্লেখ করেছেন। আর তাহলো-
একদিন হজরত মিকদাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জানতে চান, ‘কী আমল করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে? </strong><strong>রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন</strong><strong>,
তুমি উত্তম কথা বলো এবং মানুষকে খাবার দান কর।‘ (সিলসিলাহ সহিহাহ)
উল্লেখিত প্রত্যেকটি হাদিসই মুমিন মুসলমানের জন্য আমল ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। যে ব্যক্তি হাদিসের ওপর আমল করে কথা-বার্তায় শালিন হবে। কারো গালাগালের বিপরীতেও উত্তম কথায় জবাব দেবে কিংবা চুপ থাকবে, ওই ব্যক্তির জন্যই থাকবে জান্নাতের বালাখানা, ধৈর্য্যের প্রতিদান, জান্নাতে যাওয়ার সুনিশ্চিত গ্যারান্টি।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গালাগাল ও বৈরি পরিবেশে উত্তম ভাষায় কথা বলার কিংবা চুপ থাকার মাধ্যমে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। সব সময় পরস্পরের সঙ্গে অন্যায় ও অশালীন বাক্য বিনিময় পরিত্যাগ করে উত্তম কথা বলার অভ্যাস গঠনের তাওফিক দান করুন। এ অভ্যাস গঠনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের জান্নাত দান করুন। আমিন।