নারকেল-লেবু চুরি: নাতিকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে মারলো দাদা
বাগানের নারকেল ও লেবু চুরির সন্দেহে দশম শ্রেণি পড়ুয়া নাতি জিসানকে (১৭) ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন দাদা আবুল কাশেম হাওলাদার (৬৬)। গত ২৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বরিশালের মুলাদী থানাধীন জালালাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
একমাত্র নাতিকে ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার (৯ মে) রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অভিযান চালিয়ে আসামি দাদা আবুল কাশেম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতার আবুল কাশেম হাওলাদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, দুই বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম হাওলাদার প্রায় ১৩ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছোট ছেলে আজিজুল কৃষিকাজ করেন। তিনি ছোট ছেলের ঘরে খান। বড় ছেলে বিদেশ থেকে তার খরচের জন্য মাঝে-মধ্যেই ছোট ছেলের কাছে টাকা পাঠান। তাদের বাড়ির পেছনে নারকেল ও লেবুর বাগান রয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল রাতে কে বা কারা গাছ থেকে নারকেল ও লেবু চুরি করে নিয়ে যায়। সকালে ছোট ছেলে আজিজুলের স্ত্রী আখিনুর বেগম গাছে ফল না দেখে প্রবাসী বড় ছেলের স্ত্রী ও তার ছেলে-মেয়েকে সন্দেহ করে গালিগালাজ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতি হয়। ছোট ছেলে আজিজুল ও তার স্ত্রী আঁখিনুর বড় ছেলের স্ত্রী জেসমিন ও তার মেয়ে নাজমুন নাহার শিখাকে মারধর করতে থাকেন। তাদের চিৎকারে জিসান ঘর থেকে বের হয়ে তার মা ও বোনকে ছাড়িয়ে নেয়।
এসময় আজিজুলের সঙ্গে জিসানের কথা-কাটাকাটি হতে থাকলে গ্রেফতার আবুল কাশেম হাওলাদার আজিজুলের পক্ষ নিয়ে উঠানে থাকা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে জিসানের মাথায় আঘাত করেন। এতে জিসান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তারা দ্রুত পালিয়ে যান।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় জিসানকে উদ্ধার করে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ২৮ এপ্রিল রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মৃত্যুবরণ করে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহত জিসান মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে এবং লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় নিহত জিসানের মা মোসা. জেসমিন বেগম একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে সিআইডি প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করে। পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবুল কাশেম হাওলাদারের সংশ্লিষ্টতা পায়। সিআইডির এলআইসির একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে ৯ মে রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানা এলাকা থেকে আবুল কাশেম হাওলাদারকে গ্রেফতার করে।