রমজানের আমল-ইবাদত জারি থাকুক সব সময়
রহমতের মাস রমজান বিদায় নিয়েছে। ধীরে ধীরে অনেকেই তার আগের রূপে ফিরতে শুরু করেছে। আবার অনেকে রমজানের আলম-ইবাদত ধরে রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত। মাসব্যাপী রোজা-নামাজ-কোরআন তেলাওয়াতের কষ্টের প্রশিক্ষণ ধরে রাখতে ঈদের পরে আবার ৬ রোজাও রাখতে শুরু করেছে অনেকে। কিন্তু রমজানের আমলগুলো কতদিন আদায় করবে মুমিন?
আমল-ইবাদত সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুমিন-মুসলমানকে আমলি জীবন-যাপনের কথা তুলে ধরে বলেন-
وَ اعۡبُدۡ رَبَّکَ حَتّٰی یَاۡتِیَکَ الۡیَقِیۡنُ
‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯৯)
রমজানের আমলভরা দিনগুলো বিদায় নেয়ার পর মুমিনের আমল তো এক দিনের জন্যও শেষ হওয়ার কথা নয়। যিনি রমজান মাসের মালিক, তিনি তো রমজান পরবর্তী বাকি মাসগুলোর ও মালিক। রমজান মাসে যেসব নেক আমলের অভ্যাস গঠন করেছে; সেই সব নেক কাজগুলো বন্ধ না করে নিয়মিত তা চালু রাখা আল্লাহর হুকুম। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯৯)
রমজান চলে গেলেই আমল বন্ধ হবে না বরং তার আমরণ চালিয়ে যেতে হবে। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা এমনই। এ আয়াতের আলোকে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য নবিজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উপদেশগুলো মেনে চলা জরুরি। হাদিসে এসেছে-
১. ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে তা, যা নিয়মিত করে যাওয়া হয়; যদিও বা তার পরিমাণ কম হয়।’
২. ‘তোমার ঈমানকে খাঁটি কর; অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ সুতরাং নেক কাজ সামান্য সময়ের জন্য বন্ধ না করে নিয়মিতভাবে করা।
রমজান পরবর্তী করণীয়
রোজার মাস বিদায় নেওয়ার পর ঈমানদার মুমিন মুসলমানের কাজগুলো হলো নিয়মিত-
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা।
২. কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা।
৩. জিকির-আজকার করা।
৪. হালাল কাজ করা আর হারাম কাজ বর্জন করা।
রমজান মাসে সব রোজাদারেরই নামাজ ও নেক আমলের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক থাকে। রমজানের ইবাদাতের এ উৎসাহ প্রত্যেককেই ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘কেয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজেরই হিসাব নেয়া হবে। সুতরাং যার নামাজের হিসাব সঠিক হবে, তার অন্যান্য আমলও সঠিক বিবেচিত হবে। নচেৎ পরকালের বিপদের সীমা থাকবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)
কারো জন্যই উচিত নয় যে, রমজানের প্রচণ্ড পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সিয়াম-সাধনার পর আবার যেন আগের ন্যায় অন্যায় কাজে লিপ্ত না হই। ছোট্ট একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই উপমা তুলে ধরেছেন এভাবে-
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّتِیۡ نَقَضَتۡ غَزۡلَهَا مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ اَنۡکَاثًا ؕ تَتَّخِذُوۡنَ اَیۡمَانَکُمۡ دَخَلًۢا بَیۡنَکُمۡ اَنۡ تَکُوۡنَ اُمَّۃٌ هِیَ اَرۡبٰی مِنۡ اُمَّۃٍ ؕ اِنَّمَا یَبۡلُوۡکُمُ اللّٰهُ بِهٖ ؕ وَ لَیُبَیِّنَنَّ لَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ مَا کُنۡتُمۡ فِیۡهِ تَخۡتَلِفُوۡنَ
‘আর তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার পাকানো সূতো শক্ত করে পাকানোর পর টুকরো টুকরো করে ফেলে। তোমরা তোমাদের উপর অঙ্গীকারকে নিজেদের মধ্যে প্রতারণা হিসেবে গ্রহণ করছ (এই উদ্দেশ্যে) যে, একদল অপর দলের চেয়ে বড় হবে। আল্লাহ তো এর মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করেন এবং নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের জন্য কেয়ামতের দিনে স্পষ্ট করে দেবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উদাসিনতা পরিহার করার, পরকালের সফরের জন্য পথের সম্বল তৈরি করার, বছরের বাকি ১১ মাস রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। সবার জন্য আগামী রমজান কবুল করুন।। সবাইকে সবসময় ন্যায় ও কল্যাণের কাজে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।