‘অনুমান’ করা থেকে বিরত থাকবেন কেন?
অনুমান করে কোনো বিষয়ে কথা বলা যাবে না। এটি গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে অনুমান নির্ভর কথা বলতে নিষেধ করেছেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমান নির্ভর কথা বলার শাস্তি দেখেছেন। আল্লাহ তাআলা এটিকে গুনাহের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা (করে কথা বলা) থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পেছনে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।‘ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা যেন অনুমান/ধারণা এবং গিবত না করে। কোনো মুসলামানের দোষ-ত্রুটি খুঁজে না বেড়ায়। কারও গোপন বিষয়ের তালাশে না ছুটে। আর কারও এমন বিষয় আলোচনা না করে; যা তার কানে গেলে সে অসন্তুষ্ট হয়। এ কারণেই বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন আছে, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে খুব পছন্দ করে? সুতরাং যেমনি ভাবে তোমাদের স্বভাব-সুরুচিবোধ তোমাদেরকে এই বিষয়টি বাধা দেবে, তেমনিভাবে তোমাদের শরিয়তেও কোনো মুসলামান ভাইয়ের গিবত করতে বাঁধা দেয়।
শুধু কি তা-ই
অনুমান করে বাজে কমেন্ট কিংবা মিথ্যা অপবাদ; সাধারণ কবিরাহ গুনাহ নয়; বরং বান্দার হক সংশ্লিষ্ট জঘন্য কবিরাহ গুনাহ। আল্লাহ তাআলা নিজেও তা ক্ষমা করবেন না। যতই তাওবাহ করুক না কেন; তাতে বান্দার হক বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন না।
হাদিসের নির্দেশনা
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও কারো ব্যাপারে অনুমান নির্ভর কথা ও দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানোর ব্যাপারে জোরালোভাবে নিষেধ করেছেন। আবার এসব কাজের শাস্তি কেমন তা বর্ণনা করেছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোনো বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা (ধারণা/অনুমান) থেকে বেঁচে থাক। কেননা কুচিন্তা হলো সবচেয়ে (বড়) মিথ্যা কথা। কারও খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করো না। আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পেছনে লেগে থেকো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা; ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবারা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কীভাবে ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ হতে পারে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে; ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।’ (মিশকাত)
৩. মেরাজের রাতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজাবের যে ভয়ংকর পরিস্থিতি দেখেছেন; তাও ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে ওপরে (মেরাজে) নিয়ে গেলেন, আমি সেখানে এমন লোকদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখ তামার তৈরি। নখ দ্বারা তারা তাদের মুখমণ্ডল ও বুক খামচিয়ে রক্তাক্ত করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরিল! এরা কারা?! হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের মাংস খায়, অর্থাৎ পরোক্ষ নিন্দা করে এবং মানুষের পেছনে লেগে থাকে।’ (আবু দাউদ)
সুতরাং অনুমান নির্ভর কথা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি বড় মিথ্যাচার। হাদিসে পাকে এটাকে أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ (সব চেয়ে বড় মিথ্যা) গণ্য করা হয়েছে। আর এ থেকে বিরত থাকার প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ ‘তোমরা কুধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার।’ (বুখারি, মুসলিম)
ইসলামি শরিয়তে সব ধরনের অনুমান/ধারণা/গিবতই হারাম তথা কবিরা গোনাহ। চাই তা আকার-ইঙ্গিতে হোক, কথার ছলে হোক, হাতের ইশারায় হোক, কাগজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির মাধ্যমে হোক।
মুমিন মুসলমানের চিন্তার বিষয়-
যে এসব অপরাধে জড়িত হলো; সে নিজেই নিজের নেক আমলকে ধ্বংস করে দিলো। সুতরাং একটি প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়- এভাবে অনুমান নির্ভর/ধারণা করে কথা বলা চলবে নাকি বন্ধ করতে হবে? নাকি এই বদ আমলের কারণে নিজেদের বিগত জীবনের অর্জিত সওয়াবগুলো বিসর্জন দিয়ে গুনাহ কুড়িয়ে নেবে?
মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেদের দুনিয়া ও পরকালের গুনাহ থেকে বাঁচাতে দুনিয়ার জীবনে অনুমান নির্ভর/ধারণাভিত্তিক কথা বলা থেকে বিরত রাখা। গিবত ও কারো দোষ-খুঁজে বেড়ানো থেকে নিজেদের হেফাজত করা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আমল ধ্বংসকারী সব অপরাধ থেকে হেফাজত করুন। খারাপ আচরণগুলো পরিহার করে নিজের আমল ও সওয়াবকে হেজফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।