৯৯৯-এ ফোন দিয়েও সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ পর্যটকদের
সিলেটের জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়েছেন একদল পর্যটক। তারা ঢাকা থেকে সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন। ওই দলে ৮ নারী-শিশুসহ ১২ জন ছিলেন। বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসনের নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হন তারা। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেও সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
রাতে জাফলং গ্রিন রিসোর্টের সামনে ভুক্তভোগী পর্যটকরা তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গিয়ে গণমাধ্যর্মীদের এসব তথ্য জানান। পরে রাতেই তারা ঢাকায় ফিরে যান।
তারা অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়। তারা হামলার ছবি মুঠোফোনে তুলে পাঠানোর কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। তবে হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ও অনলাইন গণমাধ্যমের নিউজ ভাইরাল হলে বিকেলে পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়। আটক করা হয় ৫ জনকে।
ঢাকার কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর জুরাইন এলাকার সম্রাট সরকার বলেন, টিকিট ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রে ঢোকা যাবে না বলেই নারীদের শরীরে হাত দেয় হামলাকারী স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া নারী-পুরুষদের ওপর হামলা করে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনার পর পরই ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমাদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে জানালে ৯৯৯-এর ফোন রিসিভকারী মাথা ফাটানোর ছবি পাঠাতে বলেন। তারা ছবি দেখতে চান। তাদের আচরণে মনে হয়েছে আমরা মার্ডার হওয়ার পরও পদক্ষেপ নিতেন না।
হামলার শিকার পর্যটকরা নিজেদের দরিদ্র দাবি করে বলেন, ঢাকা থেকে এখানে ঘুরতে এসে হামলার শিকার হয়েছি। এখন আমরা মামলা করতে চাই না। জেলা প্রশাসক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক, আমরা এটাই চাই।
হামলায় তাদের অনেকে আহত হলেও সুমন নামে একজনের অবস্থা গুরুতর জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এখানে কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি করতে চায় না। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার শিকার বিথি সরকার বলেন, আমরা মেয়ে হয়েও হামলাকরীদের আটকাতে চেষ্টা করি। তাদের একই কথা বলে ‘মেরেই ফেলবো’। আমাদের জামা-কাপড় টান দেয় তারা। পশুর মতো আচরণ করেছে, এটা কোনোমতেই কাম্য নয়।
আহত সুমনের স্ত্রী সুমি সরকার বলেন, তারা আমার দেবর ও স্বামীকে মারপিঠ করছিল। সন্তান কোলে, কাকে বাঁচাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপরও হামলাকারীদের আটকানোর চেষ্টা করি। ওরা এসএস পাইপ ও কাঠ দিয়ে আমার স্বামীর মাথায় আঘাত করে। অল্পের জন্য রক্ষা, তিনি মারাই যেতেন। আজ আমার স্বামী মারা গেলে সন্তানদের কী হতো? আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। স্বামী, ভাই ও দেবরকে মারছে। কাকে বাঁচাবো? আমাদেরকেও হেনস্তা করেছে। হামলাকারীদের সুষ্ঠু বিচার হোক, এটাই আমরা চাই।
সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রলয় রায় বলেন, এ ঘটনায় আক্রান্ত সুমন সরকার বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা (নং-০৮(৫)২২) দায়ের করেছেন। হামলাকারীদের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন-গোয়াইনঘাট উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো. সেলিম আহমেদ (২১), নয়াবস্তি গ্রামের ইউসুফ মিয়ার ছেলে সোহেল রানা, পশ্চিম কালীনগর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে নাজিম উদ্দিন (২১), ইসলামপুর রাধানগর গ্রামে মৃত সিরাজ উদ্দীনের ছেলে জয়নাল আবেদীন ওরফে জানার।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে পর্যটকরদের সঙ্গে কাউন্টারের স্বেচ্ছাসেবকদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কাউন্টারে থাকা উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক লাঠি দিয়ে পর্যটকদের পেঠাতে শুরু করেন। তখন পাশে থাকা এক তরুণী ও কোলের শিশুবাচ্চা নিয়ে এক নারী হামলা থামানোর চেষ্টা করেন। এসময় তারাও হামলার শিকার হন। নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।