রোজার ফিতরা-কাফফারা ঈদগাহে যাওয়ার আগে কেন দেবেন?
রোজা রেখেছেন, সম্পদ আছে ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। রোজা রাখতে পারেননি অবশ্যই ফিদইয়া দেওয়া আবশ্যক। কোনো কারণে রোজা রাখা হয়নি তাতেও কাজা-কাফফারা দিতে হবে। আর এসবই গরিবের হক। আজ রমজানের শেষ দিন। চাঁদ দেখা না গেলেও কাল ঈদ। ঈদের আগেই গরিব-অসহায়কে ফিতরা, ফিদইয়া ও কাফফারা দিন। যথাসাধ্য সাদকা করুন। ইসলামের নির্দেশনা এমনটিই?
রোজার ফিতরা ফিদইয়া কাফফারা গরিবের হক
ফিতরা গরিবের হক। তা ঈদগাহে যাওয়ার আগেই আদায় করা জরুরি। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফিতরা আদায় করার আগ পর্যন্ত (রমজানের) রোজা আসমান ও জমিনের মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।’ সুতরাং ঈদের আগেই গরিবের এসব হক আদায় করা আবশ্যক।
১. ফিতরা
সম্পদের মালিক স্বাধীন-পরাধীন নারী-পুরুষ দায়িত্বশীল ব্যক্তির উপর পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করার নিয়ম। সাধারণত এ ফিতরা রমজানের শেষ দিনগুলোতে কিংবা ঈদের চাঁদ ওঠার পর থেকেই রাতে ও সকালে আদায় করা হয়। কেউ কেউ ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করে থাকেন।
রোজাদার মানুষ রমজানের ভুল-ত্রুটির সংশোধন ও রোজা পালনের কৃতজ্ঞতায় এ ফিতরা আদায় করেন। তাদের জন্য এ ফিতরা আদায় করা গরিব-অসহায়দের অধিকার। সুতরাং আপনজনদের মধ্য থেকে কিংবা প্রতিবেশির মধ্য থেকে প্রকৃত গরিব-অসহায়দের মাঝে ফিতরা আদায় করতে হবে। আপনজন ও প্রতিবেশিদের মধ্যে ফিতরা বিতরণ করা উত্তম। যাতে করে এলাকার প্রকৃত গরিবরা সেখানকার ধনীদের দ্বারা উপকৃত হতে পারে।
২. ফিদইয়া
অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে যারা রমজানের রোজা রাখতে পারেননি, আর তাদের সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এমন ব্যক্তিরাই রোজার ফিদইয়া আদায় করবেন। তারা প্রতিটি রোজার পরিবর্তে একজন করে দরিদ্র ব্যক্তিকে আহার করাতে হবে। ইসলামের পরিভাষায় এটিকেই ফিদইয়া বলা হয়।
তবে কোনো সুস্থ ব্যক্তি যদি ভ্রমণ, গর্ভধারণ, বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো কিংবা অন্য কোনো শরিয়তসম্মত কারণে রোজা রাখতে না পারেন তবে অন্য সময়ে তা আদায় করে নিতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর ফিদইয়ার প্রয়োজন নেই।
ফিদইয়া আদায় তথা কোনো দরিদ্রকে খাওয়ানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে। সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো- ফিদইয়া যার উপর আবশ্যক, সে নিজে উপস্থিত থেকে গরিব-মিসকিনকে খাওয়াবে। তা সম্ভব না হলে, সে অন্য কোনো বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে এ দায়িত্ব দিতে পারে।
৩. কাফফারা
শরিয়তসম্মত কোনো কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কিংবা না রাখলে তাকে রোজার কাফফারা আদায় করতে হবে। আর রোজার কাফফার হলো, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রতিটি রোজার জন্য লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে।
উল্লেখ্য অঞ্চলভেদে ফিতরা ও ফিদইয়ার নিয়ম-পদ্ধতি ও অর্থ প্রদান ভিন্ন হতে পারে। এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফিতরার ৫ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছেন। তাহলো-
১. গম/আটা
গম বা আটার পরিমাপ হবে অর্ধ সা। যা ৮০ তোলা সেরের মাপে ১ সের সাড়ে বারো ছটাক। আর কেজির হিসাবে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। তবে ন্যূনতম পূর্ণ ২ সের/কেজির মুল্য আদায় করা উত্তম ৷ যার বর্তমান বাজার মূল্য ৭৫ টাকা।
২. যব
যবের পরিমাপ হবে এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ৩০০ টাকা।
৩. কিসমিস
কিসমিসের পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ১ হাজার ৪২০ টাকা।
৪. খেজুর
খেজুরের পরিমাপ এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ১ হাজার ৬৫০ টাকা।
৫. পনির
পনিরের পরিমাপও এক সা। কেজির হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। যার বর্তমান বাজার মূল্য- ২ হাজার ৩১০ টাকা। তবে যব, কিসমিস, খেজুর ও পনির-এর ক্ষেত্রে ৪ কেজির মূল্য পরিশোধ করাই উত্তম।
মনে রাখতে হবে
যদি কোনো পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, শিশু-কিশোর ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, এবং মা-বাবাসহ মোট ৮ জন সদস্য থাকে তবে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ৮ জনের ফিতরা আদায় করবেন। এভাবে হিসাব করে ফিতরা দিতে হবে।
৪. সাদকা
কুরআনের ভাষ্যমতে সাদকা তার দানকারীকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে। সাদকা কেবলমাত্র সম্পদ দ্বারাই আদায় করতে হয় তা নয়; বরং অন্যের উপকারার্থে কোনো ভালো কাজ সম্পাদন করা অথবা অন্যের সঙ্গে সদাচরণ ও ভালমন্দের সহযোগিতা করা এমনকি হাসি মুখে কথা বলাও সাদকার অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজই সাদকা।’
সুতরাং কাউকে অপমান করে দান করার চেয়ে বরং সুন্দর, অমায়িক ও মার্জিত আচরণের ভাব বিনিময়ও উত্তম সাদকা।
এ দান-সাদকা হতে হবে আল্লাহর জন্য। লোক দেখানো কোনো সাদকা বা দানই আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না। সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মানুষের কাছে হাত পাতাকে নিজেদের অভ্যাস বানিয়ে নিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের আগে যথাযথভাবে গরিবরে অধিকার ফিতরা, সাদকা, ফিদইয়া এবং কাফফারা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।