লবিস্ট দিয়েও ‘মরণঘাতি দুঃশাসনের বিভীষিকা’ আড়াল করতে পারেনি আ.লীগ: রিজভী

0

হাজার হাজার ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করেও আওয়ামী সরকার তার মরণঘাতি দুঃশাসনের বিভীষিকা আড়াল করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে সরকারের অত্যাচার, নিপীড়নের ঘটনা প্রমাণিত দাবি করে রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গুম, খুন অপহরণ করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে গণতন্ত্রকামী জনগণের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে দেশের জনগণের কাছে তাদের  অপকর্ম আড়াল করতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশিত বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্টে দেখা যায়, কোনো অপকর্মই সরকার আড়াল করতে পারেনি।

বিএনপির এই মুখবাত্র বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কবর রচনা করতেই নিশিরাতের সরকার দেশের আইন-আদালতকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসী’ বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। এমনকি তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডাঃ জুবাইদা রহমান-যিনি রাজনীতির সাথে বিন্দুমাত্র যুক্ত নন। তার বিরুদ্ধেও অসত্য ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে সেটি এখনও চালু রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চলছে ধারাবাহিক মিথ্যাচার-অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা। এগুলি সবই সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা।

তিনি বলেন, মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া কিংবা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নিশিরাতের সরকারের মিথ্যা মামলা, অপপ্রচার আর হয়রানির নেপথ্য কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে সংকট তৈরী করা। তবে নিশিরাতের সরকারের এই কুমতলব সম্পর্কে দেশ বিদেশের গণতন্ত্রকামী শক্তি সতর্ক এবং সজাগ। বিনাভোটের সরকার বন্দুকের জোরে র‌্যাব-পুলিশ কিংবা আদালতকে ব্যবহার করে যতই অপপ্রচার চালাক, দেশে বিদেশে কেউ এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত নয়।

রিজভী বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রলণালয় প্রকাশিত এই মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছে। আইন-আদালত সরকারের কব্জায়। দেশের নিরাপত্তা বাহিনী গুম, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যায় জড়িত। বিরোধী দল নিধনে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরকার ব্যবহার করছে। বাক-স্বাধীনতা সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে-২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, বাক্সভর্তি জালভোট, বিরোধী পোলিং এজেন্টদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়ম ছিল ঐ নির্বাচনে। পর্যবেক্ষকরা ঐ নির্বাচনটিকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে স্বীকৃতি দেয়নি। সুতরাং বেগম জিয়া ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাঁকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এর অর্থ, খালেদা জিয়া সম্পর্কে অবৈধ আওয়ামী সরকারের অপপ্রচার সম্পর্কে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিভ্রান্ত নয়। এই মূহুর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিস্ট দল মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিজমের নৃশংস আত্মপ্রকাশ এখন বিশ্ববাসীর কাছেও স্পষ্ট। গণতন্ত্র হত্যাকারী এই কর্তৃত্ববাদী দলটি দেশে এক বর্বর হিংসাযুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে এখন সহিংস উন্মত্ততায় বেপরোয়া হয়ে জনগণের টুঁটি চেপে ধরেছে। তবে পতনের আতঙ্কে নিশিরাতের মহা দুর্নীতিবাজ সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে রক্তপিপাসু গেস্টাপো বাহিনী তৈরী করে লেলিয়ে দিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিরোধী মত ও রাজনৈতিক শক্তির ওপর।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিলেও তারা নারকীয় হামলা চালাচ্ছে। টলটলায়মান গদি যেকোন সময় তাসের ঘরের মতো পড়ে যেতে পারার সম্ভাবনায় আওয়ামী সরকার এখন বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গতকালও প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে বলেছেন-মেগা প্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। বাস্তবতা হলো-বিভ্রান্তি নয়, অভিনব নজীরবিহীন দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত মেগা প্রকল্প নিয়ে সত্য কথাই আজ দেশ-বিদেশে বলাবলি হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা যে লুটপাট হচ্ছে তা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার মতোই ধাপে ধাপে দেউলিয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল ১৩ এপ্রিল পলাশে ঘোড়াশাল পৌরসভা বিএনপির উদ্যোগে এতিম ও ছাত্রদের জন্য ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা এসে গতকাল সকালে ব্যাপক হামলা চালিয়ে বিএনপির প্যান্ডেল দখল করে নেয়।এ সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এতিমদের জিম্মি করে রাখে। এই ভয়ংকর সন্ত্রাসী পরিস্থিতি দেখে এলাকাবাসী বলাবলি করছিল যে, সরকার কি এখন দেশের মানুষকে ইফতারও করতে দেবে না ?

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com