আনিসুল হকের চালিকাশক্তি ছিলেন তৌফিকা করিম
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনি হলফনামায় তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছ চাষাবাদের তথ্য দিয়েছিলেন। এই আয়ের উৎস থেকে তিনি গত কয়েক বছরেই শত শত কোটি টাকার মালিক। এরপর অল্প সময়েই সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ধনকুবেরের তালিকায় নাম লেখান সাবেক এই মন্ত্রী। মুখে বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও তার কথা ছাড়া জামিন দিতে পারতেন না বিচারকরাও। আলোচিত মামলার আসামিদের জামিন করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আর ডলার নিতে বিশ্বস্ত ডালপালা তৈরি করেছিলেন। এসব ডালপালা ফুলেফেঁপে গাছে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর তারাও পলাতক।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিন্তু এসব অভিযোগ আমলে নিতেন না স্বৈরাচার হাসিনা। সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করতেন বিগত পতিত সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সালমান এফ রহমান। দুজনের সম্পর্কও ছিল মধুর। এ কারণে তারা গ্রেফতারও হয়েছেন একসঙ্গে।
জানা গেছে, আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তার এক সময়ের এপিএস, পরে বাক্সবোঝাই অবৈধ ব্যালটে নির্বাচিত বিলুপ্ত কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার জীবন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান। ৫ আগস্টের পর তিনি পলাতক। সাবেক এই মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। মন্ত্রীর নির্বাচনি হলফনামার তথ্যমতে তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছের চাষাবাদ ছিল আয়ের প্রধান উৎস। এর পর মন্ত্রী হওয়ার তার সম্পদের হিসাব বাড়তে থাকে। ঘুসের টাকা গুনতে বাসায় বসিয়েছিলেন টাকা গোনার মেশিন। সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ৪শ কোটি টাকা জামানত এবং ২০০ কোটি টাকা চলতি মূলধন দিয়ে ব্যাংকের যাত্রা শুরু করেছিলেন আনিসুল হক। তার মা প্রথমে এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর বহুল আলোচিত তৌফিকা করিমকে চেয়ারম্যান করা হয়। এই তৌফিকা করিমই ছিলেন আনিসুল হকের চালিকাশক্তি। তিনি যা বলতেন তাই করতেন আনিসুল হক। এই তৌফিকা করিমের ছেলে ও মেয়েকে কানাডায় বাড়ি করে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ‘প্রাইভেট একটি টেলিভিশনে ৪০ ভাগ শেয়ার আছে তার।
তদবিরের ডালপালা : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তদবিরের টাকা এক সময় নিতেন এপিএস জীবন। বড় বড় ব্যবসায়ীর দুর্নীতির মামলার তদবিরের লেনদেন হতো আনিসুল হকের গুলশানের অফিসে। এপিএস জীবন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর সব লেনদেনের দায়িত্ব পান বিতর্কিত তৌফিকা করিম। এই তৌফিকা হচ্ছেন পিয়াস করিমের আপন বোন। তৌফিকাকে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ দিয়ে সামাজিক জীবনে ফেরাতে চেষ্টা করেন। তদবিরের টাকা লেনদেনে আরও যুক্ত ছিলেন আনিসুল হকের এক ভাগ্নে। সব বড় বড় দুর্নীতির মামলার আসামিদের জামিনের গ্যারান্টি দিতেন তিনি। বড় বড় ক্রিমিনালদের হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর নিু আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতেন।
জানা যায়, টাকার বিনিময়ে নতুন বিচারপতি নিয়োগের মতো ঘটনা অতীতে ঘটেনি। চরম অযোগ্য ও বিতর্কিত ৩ জন জেলা জজ এবং ৫ জন অযোগ্য আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে তৌফিকা করিমের মাধ্যমে। তাদের নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার’।