মুন্সিগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক
মুন্সিগঞ্জের সদরে চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলি বিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক মাদরাসাশিক্ষার্থী। তাদের সরদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার (৯ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা ও চর বেশনাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারী ও মহসিনা হক কল্পনার দলীয় সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক পক্ষের আহতরা হলেন মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ (২২), রানা ব্যাপারে (১৮), মো. শরিফ খান (২৫)। সারোয়ার হোসেন (২৫), রিফাত হোসেন (৯) হনুফা বেগম (৬০) রিপন হোসেন পাটোয়ারী পক্ষের আহতরা হলেন তাসলিমা বেগম (৩৬), লালন মিয়া, মানিক শিকদার।
স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে থেকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মহসিনা পক্ষের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। গত কয়েক বছরে পক্ষ দুটির মধ্যে শতাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনের রিপন পাটোয়ারী বিজয়ী হলে মহসিনা হকের লোকজনকে এলাকাছাড়া করে দেয়। সম্প্রতি মহাসিনা হকের লোকজন এলাকায় ফিরে এলে আবার দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় দুপক্ষের অনেক মানুষ আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মাদরাসাছাত্র রিফাতের মা বলেন, আমি আমার ছেলেকে বাড়িতে রেখে মরিচ তোলার জন্য জমিতে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে আমার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। এ সময় রিপন পাটোয়ারী লোকজন এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে। আমার ছেলে হাতে ও পায়ে গুলি লাগে।
আহত হনুফা বেগম বলেন, সকালে রিপন পাটোয়ারীর ২৫ থেকে ৩০ জন লোক আমাদের বাড়িতে আসে। এ সময় আমি বলি, রোজার দিন তোমরা কেউ ঝগড়া কইরো না। এ কথা বলার সাথে সাথে ওরা আমার পায়ে ছররা গুলি করে।
নোয়াদ্দা গ্রামের আহত তাসলিমা বেগম বলেন, কল্পনার লোকজন বৃহস্পতিবার ২০-২৫ জন সকালে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর লুটপাট করে। আমার ঘর হতে তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার ঘরে টিভি-ফ্রিজ সব ভেঙে ফেলে। আমি বাধা দিলে পিটিয়ে আমার হাত ভেঙে দেয়।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক বলেন, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকেই আমার লোকজন গ্রামছাড়া ছিল। কিছুদিন আগে তাদের সভার মাধ্যমে গ্রামে ওঠানো হয়। তবে এক দিন পর আবারও আমার লোকজনকে হামলা করে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করে দেয় রিপনের লোকজন। যে কয়েকজন ছিল, আজ ভোরে বেছে বেছে তাদের ওপর হামলা করা হলো। আমাদের বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করেছে। প্রশাসনকে বলে আমরা কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।
নোয়াদ্দা গ্রামের বাবু গাজী বলেন, আমরা মহসিনা হকের নির্বাচন করেছিলাম, এটাই ছিল আমাদের দোষ। এ কারণে আজ সকালে রিপন পাটোয়ারীর আমঘাটা, কংশপুরা লোকজন এসে আমাদের গ্রামে হামলা করে। বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। গরু-বাছুর, ছাগল নিয়ে যায়। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি করে আমাদের ২০ থেকে ২৫ জনকে আহত করে। আহতরা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, গত নির্বাচনের পর থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিনা হকের অনেক লোকজন গ্রামের বাইরে ছিলেন। কয়েক দিন আগে একটি সভার মাধ্যমে তার লোকজনকে গ্রামে আনা হয়। গ্রামে আসার পর থেকেই তারা আবার ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। গত ২৮ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত পরপর তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোয় তার অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এ ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যারা গ্রামকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।