ইউএনওর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ

0

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক কলেজছাত্রী। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি মো. মনজুর হোসেনেকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন।

অভিযুক্ত ইউএনও মো. মনজুর হোসেন (পরিচিতি নং-১৭৩০০) বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র ও কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাকালীন ফেসবুকে কথোপকথনের মাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় মো. মনজুর হোসেনের। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলের সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।

এরই মধ্যে একাধিকস্থান থেকে ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনও মনজুর হোসেনের পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ওই কলেজছাত্রী ও ইউএনও মো. মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউসের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর কলেজছাত্রী বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএনও মো. মনজুর হোসেনকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এ সময় ইউএনও মো. মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে জানান তারা দুজন ভারতে ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন।

২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি গাড়িতে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যান। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের হায়দারাবাদে হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে তারা দুজনেই চিকিৎসা নেন।

ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনওর ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন ইউএনও মো. মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে। ইউএনওর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি তিনি গোপন করেছেন বলে স্বীকার করেন।

১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা যার যার বাড়িতে চলে যান। পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করেন এবং ইউএনও মো. মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মো. মনজুর হোসেন তাকে বিয়ে না করায় পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই কলেজছাত্রী।

jagonews24

অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির পরিধি বা সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক বুলবুল হোসেন জানান, তিনি তৎকালীন বসের হুকুম পালন করেছেন। কাজের অংশ হিসেবে তিনি ওই কলেজছাত্রীসহ তিন জনকে বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে গেছেন। এর আগেও ওই নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে একাধিকবার এসেছেন বলেও জানান তিনি।

প্রতারণার শিকার কলেজছাত্রী জানান, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেছেন। মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করেছেন। ইউএনও শুধু তাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিক স্বীকৃতি বা স্ত্রীর মর্যাদা দেননি।

কলেজছাত্রীর মা জানান, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন তার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। একাধিক পাত্র পক্ষ বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেও ইউএনওর পরামর্শে তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন বিয়ের স্বীকৃতি না দেওয়ায় তারা সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। তার মেয়ে কলেজে যেতে পারছে না। মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি এর প্রতিকার চান।

 

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com