সেদিন রাত ৯টা ২০ মিনিট। বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার গাড়ি। ৫ মিনিটেই গাড়িটি পৌঁছায় কক্সবাজারের শামলাপুর চেকপোস্টে। এপিবিএন সদস্য কনস্টেবল রাজীব গাড়িটি থামানোর সংকেত দেন। গাড়ি থামানোর পর কোনো কথা ছাড়াই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বুকে পর পর চার রাউন্ড গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী। এরপর সিনহা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এরপর লিয়াকত আলীর সফলতার ফোন পেয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ একটি সাদা মাইক্রোবাসে এবং তার সাথের ফোর্স একটি পিকআপ ভ্যানে চড়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তখন রাত ১০টা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর সঙ্গে একান্তে আড়ালে আলাপ করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ‘‘অতঃপর ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের নিকটে যান। তখন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দম্ভোক্তি করে বলেন ‘অনেক টার্গেট করার পর কুত্তার বাচ্চারে শেষ করতে পারছি’। তারপর ওসি প্রদীপ প্রথমে সিনহাকে পা দিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেন। মেজর সিনহা তখনও জীবিত ছিলেন এবং পানি চাচ্ছিলেন। আসামি প্রদীপ কুমার দাশ তখন মেজর সিনহাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বুকের বাম দিকে জোরে লাথি মারে এবং সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তার পায়ের জুতা দিয়ে সিনহার গলায় পাড়া দিয়ে ধরলে সিনহার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।’
তদন্ত কর্মকর্তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মেজর সিনহাকে লিয়াকত গুলি করেন আনুমানিক রাত ৯টা ২৫ থেকে ৯টা ৩০ এর মধ্যে। হাসপাতালে নেয়ার জন্য রাত দশটার কিছু আগে কনস্টেবল কামাল ও মামুন কোরবানির গরু বহনকারী একটি ‘ছারপোকা’ বা মিনি পিকআপ থামান। সিনহাকে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে গাড়িতে তোলা হয় রাত ১০টা ৪৪ মিনিটের দিকে। ছারপোকা গাড়ি ছাড়াও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ রাত ১০টার সময় একটি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘অথচ সেই গাড়িও আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়নি। এ সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করলে তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, গুলিবিদ্ধ আহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো: রাশেদ খানকে হাসপাতালে নেওয়ার কাজটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রায় সোয়া ঘণ্টা বিলম্বিত করা হয়েছে।’
গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে আগামীকাল সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ঘোষণা করা হবে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়।