শাস্তিতে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষক সেলিমের পরিবার, আদালতে যাবে উভয় পক্ষ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৪ ছাত্রকে চিরতরে কুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন কিনা সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
তবে কুয়েট কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শাস্তি পাওয়া ছাত্ররা। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতে যাবেন।
অন্যদিকে শিক্ষক সেলিমের পরিবারও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। তারা আরও কঠিন শাস্তির জন্য আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছন।
কুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ড. সেলিমের স্ত্রী সাবিনা খাতুন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত আমি মানি না। যাদের জন্য আমার স্বামীর জীবন গেছে, আমি তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।
তিনি বলেন, তার বাবা নেই, স্বামীকেও হারিয়েছেন। এখন পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তার একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস আনিকা (৬) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি মেয়েকে কিভাবে লেখাপড়া করাবেন? মেয়ের ছোট ছোট শখ পূরণেরও সামর্থ্য তার নেই।
তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের জন্য কুয়েট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কুয়েট কর্তৃপক্ষ মামলা না করলে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন।
স্থায়ী ও সাময়িক বহিষ্কার ও বিভিন্ন শাস্তির বিষয়ে কুয়েট ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, কুয়েটের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আদালতে যাবেন।
কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান বলেন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। ইতোমধ্যে আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করা হবে।
শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরা না ফেরার বিষয়ে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই সভায় তারা কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে ক্লাসে ফেরা না ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে কোনো মিছিল করতে হলে আগে থেকে ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া ক্যাম্পাস থেকে সকল ছাত্র সংগঠনের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ড. সেলিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পাবেন। তাকে সেই টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এছাড়া ড. সেলিমের স্ত্রী কুয়েটে চাকরির জন্য একটি আবেদন করেছেন। কিন্তু তার সরকারি চাকরির বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে, তার বয়স ৩৭ বছর। তার চাকরির বিষয়টি পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য কুয়েটের শিক্ষকদের অভিযোগ, কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার মনোনীত ছাত্রকে লালন শাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য হলের প্রভোস্ট ড. সেলিমকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। গত ৩০ নভেম্বর সেজান নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও ড. সেলিমকে চাপ প্রয়োগ এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে বাসায় গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করে শিক্ষক সমিতি। গত ৩ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কুয়েটের হল খুলবে আগামী ৭ জানুয়ারি এবং ক্লাস শুরু হবে আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে।