ময়মনসিংহে মাদ্রাসা শিক্ষকসহ গ্রেপ্তার ৪
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মতিন বাদী হয়ে একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রসহ ১০ জনকে আসামি করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেছিলেন। রোববার রাতে একটি মাদরাসা থেকে সেই মামলার প্রধান আসামিসহ মোট ৪ জনকে আটক করে র্যাব। পরে সোমবার বিকেলে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জামিয়া গাফুরিয়া দারুসসুন্নাহ ইসলামপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মুফতি কাওসার হাসান (৪২) ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার চালমোহাল জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরই মাঝে গত ৫ই মার্চ শুক্রবার ওই মসজিদে জুম্মার নামাজের খুতবার পূর্বে বয়ানে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধানের ভাইয়ের মৃত্যুদন্ড মওকুফ কারিয়া দিয়েছেন অথচ অভিজিৎ হত্যার আসামিদের ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করছে। তাই আমরা সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করব আপনারা এতে রাজি আছেন তো?’ তার এমন বক্তব্যের বিষয়ে পরদিন ওই মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুল ওই শিক্ষক কাওসার হাসানের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি। এবিষয়ে তাকে জ্ঞান না দিতে বলেন।”
পরে ওই শিক্ষক বিষয়টি মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র শিক্ষকদের কাছে জানান এবং মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির মোবাইল ফোনে ধারণ করা কথোপকথন রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দেন, এনিয়ে ছাত্র ও শিক্ষক মিলে মাদ্রাসায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বুলবুলের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন সমঝোতার চেষ্টা করে কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেন। পরে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর মাদরাসাটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি মাদরাসার কার্যকরি পরিষদের মিটিংয়ে এমন ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও ছাত্রদের বহিষ্কার ও আইনি ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষক ও ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয়।
পরে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আব্দুল মতিন। তখন থেকেই ওই ছাত্র ও শিক্ষক পলাতক হয়ে যান। এরই মাঝে গত রোববার রাতে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার জামিয়া দ্বীনিয়া দারুল উলুম মার্কাজ মাদরাসা থেকে ময়মনসিংহ র্যাব ১৪ অভিযান চালিয়ে চার আসামিকে আটক করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেন। পরে পুলিশ সোমবার বিকেলে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে কোর্টে প্রেরণ করা করে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কাদের মিয়া বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে। তারপর থেকেই তারা পলাতক ছিলো। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।