আওয়ামী লীগের ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশ-সাংবাদিকসহ আহত ১০
বগুড়ায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে এ সংঘর্ষ। বগুড়া জেলা মোটর মালিক সমিতির কর্তৃত্ব দখলে নিতে শহরের চারমাথা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহবাজন ১২ জনকে আটক করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলা মোটর মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক সমিতির অফিস ও মালামাল তার দখলে রাখেন।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক সমিতির সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা চারমাথা এলাকায় গিয়ে মোটর মালিক সমিতির অফিস দখলের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় অবস্থায় নেয় তাদের প্রতিহত করতে। তারা যেকোনো মূল্যে মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য ঘোষণা দিয়ে লাঠি হাতে সেখানে অবস্থান নেয়।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ চারমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর আমিনুলের সমর্থকরা লাঠি মিছিল শুরু করে। মোহন গ্রুপের অনেক নেতা-কর্মী চারমাথার পাশে নিশিন্দারাস্থ এলজিইডি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ দুই গ্রুপের মাঝামাঝি অবস্থান নিলে মোহন গ্রুপের শতাধিক নেতা-কর্মী লাঠি নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে আমিনুলের লোকজনকে ধাওয়া করে।
এ সময় আমিনুলের লোকজন পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা এলোপাথাড়ি যানবাহন ভাংচুর ছাড়াও মোটর মালিক সমিতির অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পাঁচটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এ দিকে ভাংচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে মারধর করা হয়। তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলি ছুড়েছে। এ সময় পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে শজিমেক হাপসাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেছে পুলিশ। এ ছাড়া শ্রমিক আব্দুল আলীমসহ (৩৮) মোট ১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। এ ঘটনার পর পুলিশ ৯ জনকে আটক করে। সংঘর্ষের কারণে ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর আমিনুল গ্রুপ চারমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে হটিয়ে দেয়। সংঘর্ষের পর চারমাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তাই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বগুড়া মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আমিনুল ইসলাম জানান, মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে এই হামলা পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক হামলা করে মালিক, শ্রমিকসহ সমিতির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করেছে।
বগুড়া মোটর মালিক সমিতির আহ্বায়ক দাবিদার মঞ্জুরুল আলম মোহন জানান, কে বা কারা হামলা করেছে ওই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মোটর মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব নিয়ে তার নাম ব্যবহার ও তার নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, ছুরিকাঘাতে আহত পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ হয়নি।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ ফয়সাল মাহমুদ বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।