গতানুগতিক গল্পেই আটকে আছে টিভি নাটক

0

নাটকের প্রাণ বলা হয় গল্পকে। একটি সুন্দর গল্পই পারে দর্শক ধরে রাখতে। এক সময় টিভি নাটকের সুনাম থাকলেও এই সময় বেশির ভাগ নাটকের গল্পই গতানুগতিক। দিনকে দিন নাটকের সংখ্যা বাড়লেও মানহীন গল্পের কারণে দর্শক নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নাটকের আংশিক দেখেই দর্শক বুঝে নেন, এর বাকি অংশ কি হবে। এই সময়ের টিভি নাটকে নেই নান্দনিকতার ছোঁয়া, নেই গল্পের ধারাবাহিকতা। নাটক থেকে হারিয়ে গেছে জীবনঘনিষ্ঠ গল্প। দ্বন্দ্ব, হাসি, কান্নাসহ ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক অসঙ্গতিগুলো উঠে আসছে না এখনকার নাটকে। হাসানোর নামে ভাড়ামো, দ্বন্দ্বের নামে বাড়াবাড়ি প্রায় প্রতিটি নাটকেই। নায়ক-নায়িকা নিয়েই সীমাবদ্ধ নাটকের গল্প। সেই সঙ্গে প্রাণহীন সংলাপ, দুর্বল অভিনয় ও গোঁজামিলের গল্পে শেষ হয় বর্তমানের নাটক। ভিউয়ের হিসেবে এসব নাটক এগিয়ে থাকলেও গ্রহণযোগ্যতা পায় না দর্শকমহলে। তবুও এসব নাটকের ছড়াছড়ি টিভি চ্যানেল-ইউটিউবের পর্দায়। এত অসঙ্গতি-অভিযোগের পরও খাপছাড়া গল্পের এসব নাটক নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো আগ্রহ দেখায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে নির্মাতারা এ ধরনের নাটক নির্মাণের প্রতিযোগিতায় ছুটছেন। এই সুযোগে অদক্ষ নির্মাতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। গুণী নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীরা মানের সঙ্গে আপস করতে না চাইলেও অদক্ষ লোক ও সিন্ডিকেটের কবলে এখন টেলিভিশন নাটক।

টিভি চ্যানেল ও দেশীয় নির্মাতারা হয়ত ভুলেই গেছেন, দর্শকরা এখনো ‘সকাল-সন্ধ্যা’, ‘আজ রোববার’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘রূপনগর’, ‘রঙ্গের মানুষ’, এবং ‘আমাদের নুরুল হুদা’র মতো ভিন্ন গল্পের নাটকগুলোই আশা করেন। ইউটিউবে নতুন নাটকের ছড়াছড়িতে এখনো দর্শকরা খুঁজে নিচ্ছেন আশি-নব্বই দশকের পুরনো নাটকগুলো। দর্শক চেহারা নয়, তারা চান গল্পনির্ভর নাটক।

এ বিষয়ে বরেণ্য অভিনেতা ড. ইনামুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, ‘একক নাটকগুলো যাও একটু ভালো থাকে, ধারাবাহিক নাটকের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। প্রতি পর্বে ১৪-১৫ মিনিটের চাংয়ে কোনো গল্প নেই। যেন তাৎক্ষণিক একটি নাট্যাংশ প্রচার করা হলো। এক পর্ব শেষ হলে আরেক পর্ব দেখার কোনো আগ্রহ থাকে না। দর্শকও গল্প খুঁজে পান না। কোনো রকম এটা গল্প টেনেটুনে দেখানো হয়। হাসি-কান্না, দুঃখ-দ্বন্দ্ব, বাস্তবতা এসব থাকে না এখনকার নাটকে। সংলাপ আছে, কিন্তু আবেগ-অনুভূতি, রাগ-অভিমান নেই। নান্দনিকতার বড়ই অভাব। সবাইকে সিরিয়াস হতে হবে। ভালো গল্পের নাটক বানাতে হবে। যেমন আগের নাটকগুলোতে ছিল। তবে বাংলাদেশ টেলিভিশন এখনো গল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছে।’

অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘দর্শক সব সময় নাটকে গল্প খোঁজে। গল্পহীন কোনো নাটক কোনোকালেও দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়নি। আমি মনে করি, আগের মতো এখন সে ধরনের আকর্ষণীয় গল্প আমরা নাটকে দর্শকদের দেখাতে পারছি না। যদিও দুই-একটি কাজ ভালো হচ্ছে, তবে সেটিকে কখনো ভালো বলা যায় না। আসলে বাজেট স্বল্পতার কারণে ভালো নাটক হয় না। কারণ, একটি ভালো গল্পের জন্য ভালো নাট্যকার খুঁজতে হবে, তাকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী সম্মানী দিতে হবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। বাজেট স্বল্পতার কারণে সস্তা গল্প নিচ্ছেন নির্মাতারা। কখনো নিজেরাই গল্প তৈরি করে নাটক নির্মাণ করছেন। এমনও আছে, স্পটে বসেই গল্প পরিবর্তন করা হয়।’

নির্মাতা-অভিনেতা গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এখন ধারাবাহিকগুলোতে গল্প নেই বললেই চলে। একই পরিস্থিতি খন্ড নাটকেও। আমি মনে করি, এখনকার বেশির ভাগ নির্মাতা নাটক নিয়ে গবেষণা করেন না। এক সময় আমাদের অনেক জনপ্রিয় নাটক নির্মাণ হয়েছে। এগুলোর কিছু সাহিত্যনির্ভর, কিছু সমসাময়িক গল্পেরও ছিল। সেই সময় কিছু কিছু নাটকের সংলাপ মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত। আর এখন দর্শক নাটক দেখাই প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছে। দুই-একটি ছাড়া অধিকাংশ ধারাবাহিকে শিল্পীদের ছোটাছুটি, লাফালাফি করতে দেখা যায়। টিভি নাটকের দর্শক ধরে রাখার জন্য ধারাবাহিকের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য; আমরা নিজেরাই দর্শকদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। সত্যি বলতে, আমাদের এখন ভালো গল্পকারের সংকট রয়েছে। সেই কারণে নাটকে ভালো গল্প পাচ্ছি না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com