চাঁদাবাজির অর্ধেক হাজী সেলিম, বাকি অর্ধেক অন্যরা!

0

পুরান ঢাকার বেশির ভাগ চাঁদাবাজি এখনো হাজী সেলিমের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে আছে। সদর ঘাটের ফুটপাথ আর ফলের মার্কেট থেকে শুরু করে কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধের অটোস্ট্যান্ড পর্যন্ত সর্বত্রই এখনো তারই লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয় সূত্র জানান, ছেলে এরফানের হাতে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর হাজী সেলিমের পাশে এখন দৃশ্য কেউ নেই। এরপরেও প্রভাব কমেনি এই পরিবারের। এখনো মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছুই বলার সাহস রাখে না।

ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু দখলবাণিজ্যই নয়, পুরান ঢাকার বেশির ভাগ চাঁদাবাজি এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন হাজী সেলিম। তিনবারের এই দাপুটে সংসদ সদস্য শারীরিকভাবে এখন কিছুটা অসুস্থ হলেও তার বাহিনীর লোকজন এখনো বেশ সক্রিয়। তারা মূলত হাজী সেলিমের নামেই চাঁদাবাজি করে আসছে। বিশেষ করে কোতয়ালি, লালবাগ ও চকবাজার এলাকায় তার আধিপত্য মোটেও কমেনি। এমনকি ক্ষমতাসীন দলে তার অবস্থান কোণঠাসা থাকলেও এলাকায় তার আধিপত্য সেই আগের মতোই আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদরঘাট ও ফলের আড়ৎ থেকে মাসে কোটি টাকার মতো চাঁদাবাজি হয়। এর প্রায় অর্ধেক হাজী সেলিমের লোকজন নিচ্ছে। বাকি অর্ধেক বিভিন্ন পকেটে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। এরফান গ্রেফতার হলেও তাদের সহযোগীরা এখনো সক্রিয়।

এ দিকে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, এরফানের সাথে অন্য যারা গ্রেফতার হয়েছে সেই দিপু ও জাহিদ এর আগেও একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে। এরা মূলত হাজী সেলিমেরই বডিগার্ড। এর আগেও অনেকবার তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে ল্যাবএইডের সামনে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো: ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় এরফান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওয়াসিফ। তাকে মারধর ছাড়াও তার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেন তিনি। এরফানের সঙ্গীরা ওয়াসিফের স্ত্রীকে তুলে নেয়ারও হুমকি দেন। এই মামলায় সেলিমপুত্র এরফানকে গ্রেফতার করতে গিয়ে হাজী সেলিমের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, মাদকদ্রব্য, ওয়াকিটকি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত হ্যান্ডকাফসহ নানা অবৈধ দ্রব্য। এই ঘটনায় সেলিমপুত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে আরো মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাজী সেলিম ও ছেলে এরফানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদকে বিভিন্ন অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। অভিযোগের বেশির ভাগই এলাকার নিরীহ লোকজনের বাড়ি বা সম্পত্তি দখল, মার্কেট-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দখল, সরকারি জায়গা, ভাওয়াল এস্টেটের সম্পত্তি স্থাপনা ও নদীর পাড় দখল সংক্রান্ত।

গত সোমবার হাজী সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্তকৃত কাউন্সিলর এরফান সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়। এরফান সেলিমকে বহনকারী গাড়ি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়া নিয়ে ঝগড়ার জেরে হামলার শিকার হন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে মামলা করেন। আসামিরা হলেন- এরফান সেলিম, তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ, হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এ বি সিদ্দিক দিপু এবং গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন।

মামলার পর ২৬ অক্টোবর র্যাব পুরান ঢাকায় চকবাজারের ২৬ দেবীদাস ঘাট লেনে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায়। এ সময় এরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী জাহিদকে হেফাজতে নেয় র্যাব। বাসায় অবৈধ মদ ও ওয়াকিটকি রাখার দায়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের দুজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com