দেশে কন্যাশিশুর ওপর যৌন সহিংসতা বেড়েছে ভয়ঙ্কর মাত্রায়

0

দেশে কন্যাশিশুর ওপর যৌন সহিংসতা বেড়েছে ভয়ঙ্কর মাত্রায়। খুব সহজে যৌন হিংসার বলি হচ্ছে তারা। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এক হাজার ৭৮ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এদের অধিকাংশই কন্যাশিশু। করোনাকালে (মার্চ-আগস্ট) গত বছরের চেয়ে শিশু যৌন নির্যাতন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। এ সময় ৬৮১ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব কন্যাশিশু দিবস’।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলির ভাষ্য অনুযায়ী, কন্যাশিশুর প্রতি এক ধরনের হিংস মানুষ যৌনদৃষ্টি তাক করে থাকে। গত ৫ বছরে শিশু যৌন সহিংসতায় হওয়া মামলার মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ৯৭ শতাংশ মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, বিচারহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন কারণে শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতাও বাড়ছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণ শেষে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জন জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে অধিকাংশের অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। বর্বর ঘটনা বলা সম্ভব নয়। এসব শিশুরা এমন বর্বর সহিংসতা কোনো দিনই ভুলতে পারবে না। তিনি বলেন, কুড়িয়ে পাওয়া শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই কন্যা শিশু। এতেই স্পষ্ট বুঝা যায়, কন্যাশিশুদের প্রতি সমাজে কি পরিমাণ বৈষম্য রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ধর্ষণের শিকার হয়ে ভর্তি হওয়ায় ২৪ জনের মধ্যে ১৭ জনই কন্যাশিশু। যাদের অধিকাংশের বয়স ৫ বছর থেকে ৯ বছরের মধ্যে। দেশে প্রায় ১০ লাখ পথশিশু-ভবঘুরে শিশু রয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কন্যাশিশু। যারা প্রতিনিয়তই যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

রাজধানীর ছোটমণি নিবাসের তত্ত্বাবধায়ক জানান, সেখানে বর্তমানে নবজাতক থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের নিচে ৩২ জন শিশু রয়েছে। যাদের অধিকাংশই কন্যাশিশু। এসব কন্যাশিশুর জন্মদাতা মা-বাবা থেকেও আজ তারা বেওয়ারিশ।

গত ৯ মাসে শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন-ধর্ষণ ও হত্যা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে আসক। সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, যৌন নির্যাতনসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ জন শিশু। এছাড়া ৬২৭ জন শিশু ধর্ষণ ও ২০ জন ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে।

২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুসারে দেশে কন্যাশিশুর সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কন্যাশিশু ঘর-ঘরেই বাহির এমনকি ঘরের অন্দর মহলেও নিরাপদ নয়। শিশু সবচেয়ে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আপনজন-পরিচিতদের দ্বারা। একই সঙ্গে শিক্ষক, প্রতিবেশীরাও শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানিসহ ধর্ষণ-গণধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সম্প্রতি সাভারে বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়ার তিন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে টঙ্গী এলাকায় ৭ বছর বয়সী চাঁদনি নামের এক শিশুকে চকোলেটের প্রলোভন দেখিয়ে গণধর্ষণ করে হত্যা করে স্থানীয় কয়েকজন কিশোর। এর আগে গত বছরের ৫ জুলাই রাজধানীর ওয়ারিতে সামিয়া আফরিন নামের এক শিশুকে একই বাসায় থাকা ভাড়াটিয়া ধর্ষণ করে হত্যা করে।

প্রতি বছর ১১ অক্টোবর বিশ্ব কন্যাশিশু দিবস পালিত হয়। বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতি বছর দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করে আসছে। দিবসটির এবার প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘আমরা সবাই সোচ্চার-বিশ্ব হবে সমতার’। এ উপলক্ষে আজ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com